শুক্রবার, ৬ আগস্ট, ২০১০

বাংলাদেশ ভ্রমণ গাইড- ৪ | আবহাওয়া |

লিখেছেন কুটুমবাড়ি (তারিখ: শুক্র, ২০১০-০৮-০৬ ২০:১৪) @ সচলায়তন
ক্যাটেগরি : | | | | | | | | | |

কখন বেড়াবেন

ষড়ঋতু এখন শুধু পঞ্জিকার পাতায়, কার্যত বাংলাদেশে ঋতু বা মৌসুম চোখে পড়ে ৪টি—বর্ষা (জুন-সেপ্টেম্বর), শরৎ (অক্টোবর-নভেম্বর), শীত (ডিসেম্বর-ফেব্রুয়ারি), এবং গ্রীষ্ম মৌসুম (মার্চ-মে)।

ঘোরাঘুরির শ্রেষ্ঠ সময় মধ্য-অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। ঘন নীল আকাশ, রোদেলা দিন এবং শুষ্ক আবহাওয়া নিয়ে এই সময় দিনের গড় তাপমাত্রা থাকে ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এপ্রিলের মধ্যে এই তাপমাত্রা বেড়ে দাঁড়ায়
৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত, আর্দ্রতা অসহনীয় হয়ে ওঠে এবং শিলাঝড়ও বিরল নয় এ সময়।

সূত্র : www.iexplore.com
বাংলাদেশ গ্রীষ্মপ্রধান দেশ। শীত মৌসুমে সাধারণত তাপমাত্রা ৯-২৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং গ্রীষ্ম মৌসুমে ২১-৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত ওঠা-নামা করে। বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত ২৫৪ সে.মি. (১০০ ইঞ্চি)-এর বেশি হলেও বৃষ্টির পরিমাণ ওঠা-নামা করে পশ্চিমাঞ্চলে ১৬০-২০০ সে.মি., দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ২০০-৪০০ সে.মি. এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ২৫০-৪০০ সে.মি. পর্যন্ত।

ভ্যাপসা গরম, সেই সাথে মৌসুমি বৃষ্টিপাত বজায় থাকে মে-র শেষ থেকে অক্টোবর পর্যন্ত। অবশ্য তাপমাত্রা সবচেয়ে বেশি থাকে মধ্য-মার্চ থেকে মে পর্যন্ত। সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত বৃষ্টি ততটা নির্ভরযোগ্য নয়, কিন্তু প্রায়ই বেশ ভারি বর্ষণ হয় এ সময় এবং সাধারণত এর সাথে বঙ্গোপসাগর থেকে সৃষ্টি হওয়া ভয়ংকর মৌসুমি ঘূর্ণিঝড় যুক্ত হয়। গড়ে প্রতি ৩ বছরে একটি প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে বাংলাদেশে। ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে মে-জুন এবং অক্টোবর-নভেম্বরে। জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাবনা কম থাকে, তবে বিশেষত উপকূলবর্তী এলাকাগুলোয় এটি একেবারে বিরল নয়। এ ধরনের ঝড়ে ক্ষয়ক্ষতিও হয় ব্যাপক, বলার অপেক্ষা রাখে না এ ধরনের ঝড়ে বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে। বাংলাদেশের আবহাওয়ার ধরন অনেকটাই যুক্তরাষ্ট্রের অ্যালাবামা, মিসিসিপি এবং লুইজিয়ানা অঙ্গরাজ্যের মতো।

সূত্র : www.uni.edu/gai/Bangladesh
যদিও গরমের মৌসুমে ভারতের অনেক অঙ্গরাজ্যের তুলনায় বাংলাদেশে তাপমাত্রা কম থাকে, তবু এই তাপই অস্বস্তিকর হয়ে ওঠে উচ্চমাত্রার আর্দ্রতার কারণে। এই স্যাঁতসেঁতে, গুমোট আবহাওয়া বজায় থাকে সারা বর্ষা মৌসুমজুড়ে, তবে তাপমাত্রা খুব কমই বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। সারা বছর ধরে অঞ্চলভেদে তাপমাত্রার তারতম্য খুব একটা দেখা যায় না। গরমের সময়, দেশের অভ্যন্তরে তাপমাত্রা একটু বেশি (ঢাকা—এপ্রিল—সর্বোচ্চ গড় তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস) থাকে সমুদ্র-তীরবর্তী অঞ্চলের (চট্টগ্রাম—এপ্রিল—সর্বোচ্চ গড় তাপমাত্রা ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস) তুলনায়। বর্ষা মৌসুমে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকে প্রায়ই, এ কারণে রৌদ্রোজ্জ্বল ঘণ্টার গড়ের দিক থেকে জুন থেকে সেপ্টেম্বরের অবস্থান বেশ পেছনে (প্রতিদিন মাত্র প্রায় ৪ ঘণ্টা), কিন্তু বছরের বাকি সময়টায় বেশ ভালো (প্রতিদিন প্রায় ৬-৮ ঘণ্টা)।

নিতান্তই প্রয়োজন না হলে রমজানের সময় ভ্রমণে বের না হওয়াটাই ভালো। আত্মপরিশুদ্ধির এই মাসে দিনের খাবার খুঁজে পাওয়া যদি কষ্টকর না-ও হয়, তবু বিব্রতকর হয়ে উঠতে পারে তো বটেই (বিশেষত ছোট শহরে)। কিছু কমদামি হোটেল এ সময় বোর্ডার নেওয়া বন্ধ রাখে।

[size=20]খরচ হবে কত[/size]

মাত্র ৬০৳ দিয়ে পুরো ১টি কক্ষ পেতে পারেন আপনি একাই, ৩০ টাকার বিনিময়ে দারুণ একটি ভূরিভোজ সারা হয়ে যেতে পারে এবং মাত্র ৫ টাকায় নাস্তার পর্ব সম্পূর্ণ করা যায়। পক্ষান্তরে, পাঁচ তারকা হোটেলের বর্ণচ্ছটাও তো কম নেই বাংলাদেশে, বিশেষত ঢাকা এবং চট্টগ্রাম শহরে।

তবে মধ্য পর্যায়ের পর্যটকই বেশি। ৪০০-১০০০ টাকায় থাকার ব্যবস্থা হয়ে যাবে প্রয়োজনীয় সব রকম সুবিধাসহ। ১২০ টাকায় এক বেলা খাবার খেতে পারবেন তৃপ্তির সাথে। পরিবহনের ক্ষেত্রে, হরেক শ্রেণীর লঞ্চ এবং ট্রেন, এবং নানা শ্রেণীর বাস রয়েছে, যা আপনাকে দিচ্ছে মূল্য এবং আরামের অপরিসীম স্বাধীনতা। জুটিদের ক্ষেত্রে, ভালো মানের হোটেলে থাকা, ট্রেনের ১ম শ্রেণীর বগিতে ভ্রমণ এবং রুচিসম্মত রেস্তোরাঁয় খাওয়া—সবই কুলিয়ে যাবে দৈনিক ১০০০ টাকার মধ্যে।

[size=24]কী খাবেন[/size]

দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোর মতোই বাংলাদেশি খাবারও ইতিহাস এবং আঞ্চলিক বৈচিত্র্য দ্বারা প্রভাবিত। বাংলাদেশ একসময় মুঘল সাম্রাজ্যের অধীনে ছিল, রন্ধন-প্রণালীতে এখনও সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলেছে। মচমচে কাবাব, কোফতা (মাংসের কিমা দ্বারা প্রস্তুত বড়ি বা গুলির ঝোল) এবং সব ধরনের বিরিয়ানি এখানে সহজলভ্য। এই ঐতিহ্যটি দাক্ষিণাত্যের [i]নিরামিষ রান্নাপদ্ধতি[/i]র সাথে যুক্ত হওয়ায় রসনা চর্চার ক্ষেত্রে ভারসাম্য বজায় রাখা সহজ হয়েছে বাঙালির জন্য।

[size=20]উপাদান এবং বিশেষত্ব[/size]

ভুনা অনেক মেনুতেই উপস্থিত থাকে এবং সাধারণত এ রান্নাটির জন্য মাংসকেই বেশি বেছে নেওয়া হয়। আরেকটি সাধারণ ডিশ হলো দোঁপেয়াজা (আক্ষরিক অর্থে দ্বিগুণ পেঁয়াজ), যা মাছ অথবা মাংস সহযোগে পরিবেশিত হয়। সম্পূর্ণ ভেজিটেরিয়ান (নিরামিষ) খাবার খুঁজে পাওয়া মুশকিল হতে পারে কারণ বাংলাদেশের সর্বত্র মাছ বা মাংসকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। ভাজি আছে কি না জিজ্ঞেস করুন। ভাজি বলতে যে কোনো ধরনের ভাজা সবজিই হতে পারে, যেমন শিম ভাজি, আলু ভাজি ইত্যাদি।
শুঁটকি, আচার, ডাল, পেঁয়াজ, মরিচ সহযোগেপান্তা ইলিশ 

প্রধান যে ৩টি রাইস ডিশ দেখতে পাওয়া যায় তার মধ্যে রয়েছে বিরিয়ানি, পোলাও (ভাজা এবং মশলা বিরিয়ানির মতোই, তবে মাংস ছাড়া) এবং সাদা ভাত। এ ছাড়া খিচুরি বেশ জনপ্রিয় খাবার। রেস্তোরাঁয় চিকেন টিক্কা সহজলভ্য এবং পরিবেশিত হয় নান (হাল্কা ফুঁ দেওয়া ময়দার রুটি যা স্যাঁকা হয় তন্দুরি ওভেনে) সহযোগে।

মাছ একটি প্রধান খাদ্য উপাদান কিন্তু নদীর মাছ কমে যাওয়ায় মেনুতে বেশি করে প্রবেশ করছে সামুদ্রিক মাছ। মাছ ঠিকভাবে রান্না হয়েছে কি না নিশ্চিত হোন, বিশেষত মাথা এবং অন্ত্রের ব্যাপারে, কারণ তা কিছু ভয়াবহ পরজীবী বহন করতে পারে।

দুটি মাছ খেতে সবচেয়ে বেশি পছন্দ করবেন হয়তো—ঝলসানো, স্মোকড্ (লবণ ইত্যাদি মিশিয়ে কাঠের ধোঁয়ায় শুকানো হয়েছে এমন) বা ভুনা—ইলিশ অথবা ভেটকি। স্মোকড্ ইলিশ খুবই ভালো, প্রধানত পাঁচতারা হোটেলে পাওয়া যায়। ভেটকি একটি সামুদ্রিক মাছ যার গায়ে কাঁটা কম থাকে। আপনি যেসব মাছ খাবেন তার মধ্যে এটি অন্যতম সেরা এবং মধ্য-পর্যায়ের রেস্তোরাঁয় এটি পরিবেশিত হয় চিংড়ি অথবা কাঁকড়ার ডিশের সাথে।

গরুর মাংস অনেকটাই সহজলভ্য, যদিও গুণগত মান অবস্থান ভেদে ভিন্ন হতে পারে। অনেক ধরনের কাবাব তৈরি হতে দেখা যায়, তার মধ্যে রয়েছে শামি কাবাব, যা মাংস কুঁচি কুঁচি করে ভুনা করা হয় এবং শিষ কাবাব, যা কম মসলাযুক্ত এবং সাধারণত গরুর মাংসে তৈরি।

সাধারণত নাস্তায় পরিবেশন করা হয় ভাজি বা ডালের সাথে রুটি অথবা চাপাতি। সব সময়ই নিরামিষ পাওয়া সম্ভব না-ও হতে পারে।

মিষ্টির প্রতি বাঙালির রয়েছে স্বভাবজাত ঝোঁক, এবং মিষ্টি-ঠাসা হরেক রকম মিষ্টান্ন সহজলভ্য। রসগোল্লা, কালো জাম, সন্দেশ, মিষ্টি দই, শেমাই, চমচম... এই তালিকাটি সত্যিই অফুরন্ত!

[size=20]পানীয়[/size]

নিরাপদ পানীয় জলের ব্যবস্থা অল্পই আছে দেশে। ঢাকায়, কলের পানি খাওয়া যাবে, তবে অবশ্যই সিদ্ধ অথবা ফিল্টারকৃত হতে হবে। রেস্তোরাঁয়, যদি নলকূপের পানিও সরবরাহ করা হয়, দূষিত হতে পারে গ্লাসের মাধ্যমে।

প্রায় সব জায়গায় বোতলজাত পানি পাওয়া সম্ভব। দেশেই তৈরি হয় বলে দাম তেমন বেশি নয় (১০-২০৳, রেস্তোরাঁয় ২৫৳), কিন্তু অনেক ব্র্যান্ডের বোতলেই দূষিত পানি পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে, জল পরিশ্রুত করার যন্ত্রে সমস্যা দেখা দিলেও তারা উৎপাদন বন্ধ রাখতে চায় না ব্যবসায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ভয়ে। যখন খোলা স্টল থেকে বোতলজাত পানি ক্রয় করবেন তখন নিশ্চিত হোন যে প্লাস্টিকের সিলটি কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।

[size=20]সাধারণ পানীয়[/size]

দেশের প্রায় সর্বত্র প্রতি কাপ চা আলাদাভাবে তৈরি হয়। ফলে ‘চিনি ছাড়া চা’ পেতে কোনো সমস্যা হবে না, কিন্তু যেহেতু কন্ডেন্সড মিল্ক ব্যবহার করা হয় তাই খুব বেশি পার্থক্য হবে না অবশ্য!

কফি খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হতে পারে, তাই আপনার ট্রাভেল-ব্যাগে ইন্সট্যান্ট কফি রেখে দিতে পারেন।

টাটকা লাইম সোডা সাধারণভাবে ঢাকার উন্নত রেস্তোরাঁয় পাওয়া যায়, ঢাকার বাইরে শুধুমাত্র অভিজাত হোটেলগুলোয়। কখনো কখনো পাকস্থলীর অম্লতা (এসিডিটি) উপশমে এটিই শ্রেষ্ঠ পানীয়।

ডাবের পানি পান করা নিরাপদ, সতেজকারক এবং ডায়রিয়ার রোগীর জন্য উপকারী।

লাচ্ছি। দধিজাত এই সতেজকারক পানীয়টি এখনও তেমন জনপ্রিয় হয়নি, তাই খুঁজে পাওয়া কষ্টকর হতে পারে।

[size=20]সুরা পান[/size]

প্রতিটি প্রধান শহরে অন্তত একটি সরকারি মালিকানাধীন শপ রয়েছে যা অ্যালকোহল বিক্রি করে, কিন্তু সেগুলো কৌশলগত কারণে (ইসলামী মূল্যবোধ যাতে আহত না হয়, সেজন্য!) গুপ্ত স্থানে রয়েছে। ‘বেছে নেওয়া’ যাবে শুধুমাত্র কড়া ড্রিংক, যেমন হুইস্কি। ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং টেকনাফে আপনি কখনো কখনো এশিয়ান হুইস্কি খুঁজে পেতে পারেন এবং হেইনেকেন অথবা টাইগার বিয়ার গোপনে বিক্রি হয়; প্রতি ক্যান ন্যূনতম ১৮০৳।

হিন্দু এবং আদিবাসীরা সাধারণভাবে অ্যালকোহল বিমুখ নয়, চোলাইকৃত মদ পান করা তাদের বিশেষ বৈশিষ্ট্য—যা ঘরেই তৈরি করা হয়, প্রধানত ভাত দিয়ে। চা বাগানগুলোয়, যেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ কর্মচারীই হিন্দু, স্থানীয় মদ পান করা, বিশেষত উৎসবের সময়, খুবই সাধারণ দৃশ্য। পার্বত্য চট্টগ্রামে যেসব মদ তৈরি হয় তা যেন ধাক্কা মারে উন্মত্ত খচ্চরের মতো!

প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোয় মিলতে পারে তাড়ি, যা মূলত তালের রস থেকে তৈরি। এটি যখন টাটকা তখন বেশ ঠাণ্ডা এবং মিষ্টি, কিন্তু গাজিয়ে তোলা হলেই পরিণত হয় স্থানীয় বিয়ারে। অনেক তাল গাছেই খাঁজ কাটা থাকে রস সংগ্রহ করার জন্য। তাড়ি পাওয়া যাবে শুধুমাত্র আদিবাসী এলাকাগুলোতে। [i]কেসার রোজ[/i] একটি গ্রামীণ মদ, তৈরি হয় পুরোনো ঝোলাগুড় থেকে। এটি গরম পানির সাথে মেশানো হয় এবং স্বাদে অনেকটা ব্র্যান্ডি অথবা কনিয়্যাকের মতো।

[size=20]কোথায় খাবেন[/size]

নিম্ন-পর্যায়ের রেস্তোরাঁগুলোয় স্বাস্থ্যবিধির খুব একটা তোয়াক্কা করা হয় না, উদাহরণ হিসেবে, বাড়তি ভাত হাত দিয়ে পরিবেশন করা হতে পারে। মেয়েরা খুব কমই খেয়ে থাকে, তবে তাঁরা সেখানে অবাঞ্ছনীয় নন। কিছু রেস্তোরাঁয় ‘ফ্যামিলি রুম’ আছে। প্রায়ই এটি একটি বক্স মাত্র, এখানে নারী এবং পরিবারসমূহ খাবে বলে ধরে নেওয়া হয়। তবে এটি নারী এবং পুরুষ উভয়ের জন্যই একটি সুযোগ কিছুটা হলেও খাওয়ার আব্রু রক্ষা করার।

ঢাকায় আপনি দারুণ সব ইন্ডিয়ান, থাই, চাইনিজ এবং কোরিয়ান রেস্তোরাঁও খুঁজে পাবেন, কিন্তু ঢাকার বাইরে ভিন্ন স্বাদের খাবার বলতে শুধু চাইনিজ খাবার (পড়ুন চাইনিজের বাংলাদেশি রূপায়ন), যা আপনি সবখানেই পাবেন, এমনকি ছোট শহরগুলোতেও। অনেকের কাছেই চাইনিজ রেস্তোরাঁর এই প্রাধান্য ধাঁধার মতো মনে হয়, বিশেষ করে যখন হাতে গোনা কয়েকটি চাইনিজ লোক রয়েছে বাংলাদেশে! এসব প্রতিষ্ঠানে ডিশের দাম শুরু হয় ৬০৳ থেকে, কিন্তু ঢাকায় তা আরও ৩ গুন পর্যন্ত বেশি হতে পারে।

[size=20]জলখাবার[/size]

রুটি এবং বিস্কুট সর্বত্র সহজলভ্য, এবং কিছু ছোট শহরে এগুলোই শুধু আপনাকে খাওয়ার অনুভূতি এনে দিতে সক্ষম। ‘সল্ট’ বিস্কুট ততটা নোনতা নয়, মিষ্টির মতো অতটা বৈচিত্র্যও এতে খুঁজে পাওয়া যায় না।

স্থানীয় ফাস্ট ফুড রয়েছে পর্যাপ্ত এবং খুব কম ক্ষেত্রেই মূল্য ৫ টাকার চেয়ে বেশি। চেষ্টা করুন পরিচ্ছন্ন এবং গরম খাবার খুঁজে পেতে।

[size=20]নিরামিষ খাবার[/size]

বাঙালির হেঁশেল ঐতিহ্য বিকশিত হয়েছে প্রাপ্যতার ওপর ভিত্তি করে, মাংসের অপ্রতুলতার কারণে নিরামিশাষী হওয়াটা তাই প্রায় বাধ্যতামূলকই ছিল। এর অর্থ এই যে আপনি যদি বিচক্ষণ হন তাহলে কিছু উপাদেয় নিরামিষ খাবার খুঁজে পেতে সমর্থ হবেন। ভেজিটেরিয়ান হলে আপনাকে বুঝিয়ে বলতে হবে যে ‘মাংস ছাড়া’ মানে সব ধরনের প্রাণী, যার মধ্যে মাছও অন্তর্ভুক্ত এবং টুকরো-টাকরাও গ্রহণযোগ্য নয়। অনেক ভেজিটেরিয়ান অভিযোগ করে থাকেন যে দৃশ্যমান নিরামিষ খাবারের মধ্যে তাঁরা মাংসের চিহ্ন খুঁজে পেয়েছেন।

যদি মনে সন্দেহ থাকে তাহলে সব সময়ই আশ্রয় নিতে পারেন তাজা ফলের, বিশাল ব্যাপ্তির কারণে যা শুধুই সান্ত্বনা মাত্র নয়। প্রধান ফল উৎপাদনকারী এলাকার মধ্যে রয়েছে সিলেটের পার্বত্যাঞ্চল, পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং রাজশাহী বিভাগ।

[size=20]রীতিনীতি[/size]

বাঙালি খাবার মেঝেতে পরিবেশন করার ঐতিহ্য বহু দিনের। পেতে দেওয়া পাটির ওপর বসেন প্রতিটি লোক। পাটির সম্মুখে বড় একটি গামলা বা কলাপাতা রাখা হয়, যার চতুর্দিকে রাখা হয় বাটিগুলো।

টেবিল-চেয়ারের ব্যবহার দ্রুত বর্ধনশীল এবং রেস্তোরাঁর ক্ষেত্রে অবশ্যম্ভাবী। শব্দ করুন, ঢেঁকুর তুলুন, মোটের ওপর, আমোদ করে খান। হাত দিয়ে খাওয়া শুধুই ব্যবহারিক বিষয় নয়, স্বাদ নেওয়ার জন্য জিহ্বায় দেওয়ার আগে মূল্যায়নের কাজটাও এভাবে সারা হয়ে যায়। সতর্কভাবে খাবার চিবান এবং অচর্বণযোগ্য উপাদান, যেমন হাড় রেখে দিন টেবিলের ওপর। ভুলে যান কব্জি ডুবিয়ে খেলে কেমন দেখাবে বা আঙুল চুষে খেলে লোকে কী বলবে। শুধু কাপড়ের হাতা গুটিয়ে নিন এবং শুরু করে দিন।

******
পূর্ববর্তী পর্ব : [url=http://www.sachalayatan.com/guest_writer/33792]বাংলাদেশ ভ্রমণ গাইড- ১ | সংস্কৃতি ও স্থাপত্যরীতি |[/url]
[url=http://www.sachalayatan.com/guest_writer/33882]
বাংলাদেশ ভ্রমণ গাইড- ২ | বাংলাদেশ এল কোথা থেকে |[/url] [url=http://www.sachalayatan.com/guest_writer/33952]
বাংলাদেশ ভ্রমণ গাইড- ৩ | পরিবেশ |[/url]
******
ছবি-কৃতজ্ঞতা : ১. [url=http://www.google.com/imgres?imgurl=http://static.guim.co.uk/sys-images/Travel/Pix/pictures/2007/11/15/Curry4.jpg&imgrefurl=http://www.guardian.co.uk/travel/bangladesh%2Brestaurants&h=276&w=460&sz=36&tbnid=0vOmtC_UwKyaPM:&tbnh=77&tbnw=128&prev=/images%3Fq%3Dbangladesh%2Bfood&usg=__BwFD0S043tDEidSmrEmJRm7zheg=&sa=X&ei=jrVbTLSAHITUuAPciaGaBQ&ved=0CBwQ9QEwAA]www.guardian.co.uk/travel/bangladesh[/url] ২. [url=http://en.wikipedia.org/wiki/Bangladeshi_cuisine]উইকিপিডিয়া[/url]
তথ্যসূত্র : [url=http://www.lonelyplanet.com/bangladesh]lonely planet Bangladesh[/url]
[url=http://www.southtravels.com/asia/bangladesh/weather.html]www.southtravels.com[/url]
[url=http://www.worldtravelguide.net/country/27/climate/Indian-Subcontinent/Bangladesh.html]www.worldtravelguide.net[/url]
[url=http://wikitravel.org/en/Bangladesh]wikitravel.org/en/Bangladesh[/url]
******
কুটুমবাড়ি
mhdrakib@gmail.com

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন