লিখেছেন কুটুমবাড়ি (তারিখ: বিষ্যুদ, ২০১০-০৭-২৯ ০৮:৩২) @ সচলায়তন
ক্যাটেগরি : দেশচিন্তা | আর্সেনিক দূষণ | উদ্ভিদ | কুটুমবাড়ি | পরিবেশ | পরিবেশ ইস্যু | পাখি | প্রাণী | ভূমি | ভ্রমণ গাইড
দক্ষিণ এশিয়ার দীর্ঘতম দুটি নদী—গঙ্গা আর ব্রহ্মপুত্র যেখানে বঙ্গোপসাগরে মিশেছে সেখানেই কালের পরিক্রমায় গড়ে ওঠা বঙ্গীয় ব-দ্বীপ। এই গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র মোহনা অঞ্চলে প্রায় ৩০০০ বছর বা তারও পূর্ব থেকে যে জনগোষ্ঠীর বসবাস, তা-ই ইতিহাসের নানান চড়াই উৎরাই পেরিয়ে এসে দাঁড়িয়েছে বর্তমানের স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশরূপে। ভৌগোলিক বিচারে বাংলাদেশের অবস্থান দক্ষিণ এশিয়ায়, ভারত ও মিয়ানমারের মাঝখানে। এর ভূখন্ড ১ লক্ষ ৪৭ হাজার ৫৭০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত, অর্থাৎ প্রায় ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের (আয়তন প্রায় ১ লক্ষ ৫১ হাজার ১৭০ বর্গ কিলোমিটার) সমান। [তথ্যসূত্র : [url=http://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%82%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B6#.E0.A6.AD.E0.A7.82.E0.A6.97.E0.A7.8B.E0.A6.B2_.E0.A6.93_.E0.A6.9C.E0.A6.B2.E0.A6.AC.E0.A6.BE.E0.A6.AF.E0.A6.BC.E0.A7.81]উইকিপিডিয়া][/url]
বুধবার, ২৮ জুলাই, ২০১০
শনিবার, ২৪ জুলাই, ২০১০
বাংলাদেশ ভ্রমণ গাইড- ২ | বাংলাদেশ এল কোথা থেকে |
লিখেছেন কুটুমবাড়ি (তারিখ: রবি, ২০১০-০৭-২৫ ২৩:৪৮) @ সচলায়তন
ক্যাটেগরী: দেশচিন্তা | মুক্তিযুদ্ধ | ইতিহাস | কুটুমবাড়ি | ভ্রমণ গাইড
[i]বাংলাদেশের অতীত অধ্যায় মানেই নাটকীয় পালাবদলের ইতিবৃত্ত; হাঙ্গামা ও শান্তি, প্রাচুর্য ও দারিদ্র্যের এমন পিঠাপিঠি অবস্থান বিশ্ব-ইতিহাসেরই বিরল ঘটনা। বাংলাদেশ কখনও সাংস্কৃতিক মহিমায় সমুজ্জ্বল, কখনও যুদ্ধক্লান্ত ও ধ্বংসোন্মুখ। এই দেশের হুড়হাঙ্গামাপূর্ণ ইতিহাস অন্তর্দন্ধ, একের পর এক বহিরাক্রমণ এবং মহাপরাক্রমশালী সাম্রাজ্যের উত্থান ও পতনের সাক্ষী।[/i]
ক্যাটেগরী: দেশচিন্তা | মুক্তিযুদ্ধ | ইতিহাস | কুটুমবাড়ি | ভ্রমণ গাইড
[i]বাংলাদেশের অতীত অধ্যায় মানেই নাটকীয় পালাবদলের ইতিবৃত্ত; হাঙ্গামা ও শান্তি, প্রাচুর্য ও দারিদ্র্যের এমন পিঠাপিঠি অবস্থান বিশ্ব-ইতিহাসেরই বিরল ঘটনা। বাংলাদেশ কখনও সাংস্কৃতিক মহিমায় সমুজ্জ্বল, কখনও যুদ্ধক্লান্ত ও ধ্বংসোন্মুখ। এই দেশের হুড়হাঙ্গামাপূর্ণ ইতিহাস অন্তর্দন্ধ, একের পর এক বহিরাক্রমণ এবং মহাপরাক্রমশালী সাম্রাজ্যের উত্থান ও পতনের সাক্ষী।[/i]
মঙ্গলবার, ২০ জুলাই, ২০১০
বাংলাদেশ ভ্রমণ গাইড- ১ | সংস্কৃতি ও স্থাপত্যরীতি |
লিখেছেন কুটুমবাড়ি (তারিখ: বুধ, ২০১০-০৭-২১ ০২:৫৩) @ সচলায়তন
ক্যাটেগরী: সমসাময়িক | পর্যটন গাইড | বাংলাদেশ | ভ্রমণ
[size=24]ঠিকানা বাংলাদেশ![/size]
পাহাড় ও অরণ্য, মসজিদ ও মন্দির, সৈকত ও দ্বীপ—এই সবকিছু ছাপিয়ে যে পরিচয়টি সবচেয়ে বড় হয়ে ওঠে বাংলাদেশের, তা হচ্ছে তার নামটি—বাংলাদেশ! একসময় ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, দারিদ্র্য, দুর্নীতি আর উপচে পড়া ভিড়ের জন্যই বেশি পরিচিত ছিলাম আমরা। ধীরে ধীরে সেই ভাবমূর্তির পরিবর্তন ঘটতে শুরু করেছে। আমরা এখন মাথা তুলে দাঁড়াতে শিখেছি, ক্রমেই হয়ে উঠছি বিশ্বায়নের সক্রিয় অংশীদার। ঐতিহাসিক করুণ পরিণতি বা উন্নয়নের পথে বারবার হোঁচট খাওয়া—কোনো কিছুই দমাতে পারেনি আমাদের। এখন আর বাংলাদেশ মানেই তলাবিহীন ঝুড়ি নয়—যেমনটি একসময় ধারণা ছিল পশ্চিমা গণমাধ্যমের। বাংলাদেশ এখন ভালো খবর তৈরি করতেও শিখেছে।
ক্যাটেগরী: সমসাময়িক | পর্যটন গাইড | বাংলাদেশ | ভ্রমণ
[size=24]ঠিকানা বাংলাদেশ![/size]
পাহাড় ও অরণ্য, মসজিদ ও মন্দির, সৈকত ও দ্বীপ—এই সবকিছু ছাপিয়ে যে পরিচয়টি সবচেয়ে বড় হয়ে ওঠে বাংলাদেশের, তা হচ্ছে তার নামটি—বাংলাদেশ! একসময় ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, দারিদ্র্য, দুর্নীতি আর উপচে পড়া ভিড়ের জন্যই বেশি পরিচিত ছিলাম আমরা। ধীরে ধীরে সেই ভাবমূর্তির পরিবর্তন ঘটতে শুরু করেছে। আমরা এখন মাথা তুলে দাঁড়াতে শিখেছি, ক্রমেই হয়ে উঠছি বিশ্বায়নের সক্রিয় অংশীদার। ঐতিহাসিক করুণ পরিণতি বা উন্নয়নের পথে বারবার হোঁচট খাওয়া—কোনো কিছুই দমাতে পারেনি আমাদের। এখন আর বাংলাদেশ মানেই তলাবিহীন ঝুড়ি নয়—যেমনটি একসময় ধারণা ছিল পশ্চিমা গণমাধ্যমের। বাংলাদেশ এখন ভালো খবর তৈরি করতেও শিখেছে।
সোমবার, ১৯ জুলাই, ২০১০
দ্য পিকচার অব ডোরিয়ান গ্রে | ৭ম পর্ব |
বিপর্যয়
গাড়িতে চড়ে থিয়েটারের উদ্দেশে চলেছেন দুই বন্ধু—লর্ড হেনরি এবং বাসিল। ডোরিয়ানও আছে সাথে। তাঁরা দুজনই একটু উৎকণ্ঠায় আছেন সিবিল ভেনের কথা ভেবে। সত্যি বলতে কি, এমন একটি তন্বী সুন্দরী, যে কিনা ডোরিয়ানের হৃদয় দখল করে নিয়েছে, কৌতূহলী করে তুলছে তাদের দুজনকে। মেয়েটি কি তাঁদেরও আকৃষ্ট করতে পারবে? নাকি ডোরিয়ান আরও যোগ্য স্ত্রী বেছে নেয়ার সুযোগ হাতছাড়া করছে?
একজন হৃষ্টপুষ্ট ম্যানেজার, দুহাতে রত্নখচিত আংটি-পরা, পথ দেখিয়ে তাঁদের নির্ধারিত
গাড়িতে চড়ে থিয়েটারের উদ্দেশে চলেছেন দুই বন্ধু—লর্ড হেনরি এবং বাসিল। ডোরিয়ানও আছে সাথে। তাঁরা দুজনই একটু উৎকণ্ঠায় আছেন সিবিল ভেনের কথা ভেবে। সত্যি বলতে কি, এমন একটি তন্বী সুন্দরী, যে কিনা ডোরিয়ানের হৃদয় দখল করে নিয়েছে, কৌতূহলী করে তুলছে তাদের দুজনকে। মেয়েটি কি তাঁদেরও আকৃষ্ট করতে পারবে? নাকি ডোরিয়ান আরও যোগ্য স্ত্রী বেছে নেয়ার সুযোগ হাতছাড়া করছে?
একজন হৃষ্টপুষ্ট ম্যানেজার, দুহাতে রত্নখচিত আংটি-পরা, পথ দেখিয়ে তাঁদের নির্ধারিত
শনিবার, ১৭ জুলাই, ২০১০
ভেতো বাঙালি
আমি এক জন্ম-কুঁড়ে
ভাবছি বসে এক দুপুরে
কোন বা পথে এভারেস্টে যাই
ও মন রে...
থাকব না তো আস্তাকুড়ে
উঠব ঠিকই জগৎ ফুড়ে
আমি আর আমাতে যে নাই
ও মন রে...
এই না ভেবে দিলাম পাড়া
হঠাৎ হলাম বিছানা ছাড়া
আমি কি হায় স্বপ্ন দেখছি, সাঁই
ও মন রে...
মনটা হলো এমন তেতো
চিরকালই বাঙালি ভেতো
স্বপ্ন দেখার সাধ্য আমার নাই
ও মন রে...
কুটুমবাড়ি
mhdrakib@gmail.com
ভাবছি বসে এক দুপুরে
কোন বা পথে এভারেস্টে যাই
ও মন রে...
থাকব না তো আস্তাকুড়ে
উঠব ঠিকই জগৎ ফুড়ে
আমি আর আমাতে যে নাই
ও মন রে...
এই না ভেবে দিলাম পাড়া
হঠাৎ হলাম বিছানা ছাড়া
আমি কি হায় স্বপ্ন দেখছি, সাঁই
ও মন রে...
মনটা হলো এমন তেতো
চিরকালই বাঙালি ভেতো
স্বপ্ন দেখার সাধ্য আমার নাই
ও মন রে...
কুটুমবাড়ি
mhdrakib@gmail.com
আমি 'মার-দিও-না' বলচি
লিখেছেন কুটুমবাড়ি (তারিখ: সোম, ২০১০-০৭-০৫ ২১:৪৬)@ সচলায়তন
ক্যাটেগরী: ব্লগরব্লগর | সমসাময়িক | রম্যরচনা | ফুটবল | বিশ্বকাপ
আমি 'মার-দিও-না' বলচি। আমি এখুনো ভামোস ভামোস আর-জিতি-না ফুটবল দলের বল ম্যানেজার আচি। আমার দল বিশ্বকাপ ফুটবল থেকে অসময়ে বিদায় নিয়েচে। শুনেচি অনেকেই আনন্দে বিজয় মিচিল করচেন। আমি নিজেও বিশ্বকাপ থেকে ব্রাজিলের বিদায়ে অনেকেরই কোলে গিয়ে উঠেচিলুম। আর এতে দোষেরই বা কী আচে!
কিন্তু যারা আমাকে নিন্দোচ্চেন তাদেরকে একটু পেচনে তাকাতে বলি। ঈশ্বরের হাত এবং আমার পা দিয়ে আগেও আমি বিশ্বকাপ
ক্যাটেগরী: ব্লগরব্লগর | সমসাময়িক | রম্যরচনা | ফুটবল | বিশ্বকাপ
আমি 'মার-দিও-না' বলচি। আমি এখুনো ভামোস ভামোস আর-জিতি-না ফুটবল দলের বল ম্যানেজার আচি। আমার দল বিশ্বকাপ ফুটবল থেকে অসময়ে বিদায় নিয়েচে। শুনেচি অনেকেই আনন্দে বিজয় মিচিল করচেন। আমি নিজেও বিশ্বকাপ থেকে ব্রাজিলের বিদায়ে অনেকেরই কোলে গিয়ে উঠেচিলুম। আর এতে দোষেরই বা কী আচে!
কিন্তু যারা আমাকে নিন্দোচ্চেন তাদেরকে একটু পেচনে তাকাতে বলি। ঈশ্বরের হাত এবং আমার পা দিয়ে আগেও আমি বিশ্বকাপ
দ্য পিকচার অব ডোরিয়ান গ্রে | ১-৬ পর্ব |
লিখেছেন কুটুমবাড়ি (তারিখ: শুক্র, ২০১০-০৭-০৯ ২০:০৮)@ সচলায়তন
ক্যাটেগরী: ব্লগরব্লগর
তার সম্পর্কে আশ্চর্য সব গল্প লন্ডনজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। সে দেখতে এখনও পবিত্র, কিন্তু আসলেই কি তাই?
সে তার প্রতিটি মর্জি, প্রতিটি বাতিক, প্রতিটি চাহিদা পূরণ করে। সব ইন্দ্রিয়ের গভীর রহস্য সে উন্মোচন করে। অসৎ চরিত্র নিয়ে, সে ধ্বংস ও রোমাঞ্চের উন্মত্ত ক্ষুধা মিটিয়ে চলে!
কিন্তু তার সব সম্পদ, সব সঞ্চয়—পলায়নের উপায় মাত্র। যেখানে তার শৈশব কেটেছে—সেই নিঃসঙ্গ, তালাবদ্ধ ঘরটার দেয়ালে আঁটা তার গন্তব্য। ভয়ংকর ছবিটা সে ঝুলিয়ে রেখেছে সেখানে, যার ধারাবাহিক বিবর্তন প্রকাশ করছে তার নৈতিক অধঃপতনকে। দৃষ্টি থেকে আড়ালে রাখতে, সে যবনিকা টেনে রেখেছে সেটার ওপর।
তার কাছে, পঙ্কিলতাই এখন সুন্দর!
একসময়ের নিষ্পাপ এই ছেলেটার এ কী হলো? শুধুমাত্র ডোরিয়ান গ্রে জানে এর উত্তর। লর্ড হেনরির বই তাকে দূষিত করে ফেলেছে!
ক্যাটেগরী: ব্লগরব্লগর
তার সম্পর্কে আশ্চর্য সব গল্প লন্ডনজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। সে দেখতে এখনও পবিত্র, কিন্তু আসলেই কি তাই?
সে তার প্রতিটি মর্জি, প্রতিটি বাতিক, প্রতিটি চাহিদা পূরণ করে। সব ইন্দ্রিয়ের গভীর রহস্য সে উন্মোচন করে। অসৎ চরিত্র নিয়ে, সে ধ্বংস ও রোমাঞ্চের উন্মত্ত ক্ষুধা মিটিয়ে চলে!
কিন্তু তার সব সম্পদ, সব সঞ্চয়—পলায়নের উপায় মাত্র। যেখানে তার শৈশব কেটেছে—সেই নিঃসঙ্গ, তালাবদ্ধ ঘরটার দেয়ালে আঁটা তার গন্তব্য। ভয়ংকর ছবিটা সে ঝুলিয়ে রেখেছে সেখানে, যার ধারাবাহিক বিবর্তন প্রকাশ করছে তার নৈতিক অধঃপতনকে। দৃষ্টি থেকে আড়ালে রাখতে, সে যবনিকা টেনে রেখেছে সেটার ওপর।
তার কাছে, পঙ্কিলতাই এখন সুন্দর!
একসময়ের নিষ্পাপ এই ছেলেটার এ কী হলো? শুধুমাত্র ডোরিয়ান গ্রে জানে এর উত্তর। লর্ড হেনরির বই তাকে দূষিত করে ফেলেছে!
শুক্রবার, ১৬ জুলাই, ২০১০
বানানায়তন ১ : ই-কার বনাম ঈ-কার
লিখেছেন (তারিখ: বিষ্যুদ, ২০১০-০৭-০১ ২২:৩১) @ সচলায়তন
ক্যাটেগরী : ব্লগরব্লগর | চিন্তাভাবনা | ই-কার না ঈ-কার | বাংলা | বানান | বানানরীতি | ব্যাকরণ | ভাষাবিজ্ঞান
আমাদের হাতে একটি প্রমিত বাংলা বানানরীতি আছে। অথচ এত কষ্টের মাতৃভাষায় যে সুখ করে কিছু লিখব বা পড়ব! বানানের দৌরাত্ম্যে সে সুযোগ খুবই কম। সারা বিশ্বেই বানান উচ্চারণ-নির্ভর নয়। ব্যাকরণের ছাপ তাতে থাকবেই থাকবে। কিন্তু বাংলা বানানের বিশৃঙ্খলা যেন কিছুতেই কমবার নয়।
যা হোক আশার কথা হলো একটি গ্রহণযোগ্য বানানরীতি আমাদের হাতে আছে। বাংলা একাডেমীর বানানরীতিটি ভাষাবৈজ্ঞানিক এবং প্রগতিশীল। এই রীতিটি ভাষার ব্যবহারকে
ক্যাটেগরী : ব্লগরব্লগর | চিন্তাভাবনা | ই-কার না ঈ-কার | বাংলা | বানান | বানানরীতি | ব্যাকরণ | ভাষাবিজ্ঞান
আমাদের হাতে একটি প্রমিত বাংলা বানানরীতি আছে। অথচ এত কষ্টের মাতৃভাষায় যে সুখ করে কিছু লিখব বা পড়ব! বানানের দৌরাত্ম্যে সে সুযোগ খুবই কম। সারা বিশ্বেই বানান উচ্চারণ-নির্ভর নয়। ব্যাকরণের ছাপ তাতে থাকবেই থাকবে। কিন্তু বাংলা বানানের বিশৃঙ্খলা যেন কিছুতেই কমবার নয়।
যা হোক আশার কথা হলো একটি গ্রহণযোগ্য বানানরীতি আমাদের হাতে আছে। বাংলা একাডেমীর বানানরীতিটি ভাষাবৈজ্ঞানিক এবং প্রগতিশীল। এই রীতিটি ভাষার ব্যবহারকে
স্বর্গের টিকিট
লিখেছেন কুটুমবাড়ি (তারিখ: রবি, ২০১০-০৬-২৭ ১৭:৪৪)@ সচলায়তন
ক্যাটেগরী: গল্প | সাহিত্য | রম্যরচনা | অণুগল্প | স্বর্গ | যুবা (১৮ বছর বা তদুর্দ্ধ)
স্বর্গে ভিড় খুব বেড়ে গিয়েছিল। একটি সিদ্ধান্ত নেয়া হলো শুধু এক দিনের জন্য। ওইদিন স্বর্গে ঢুকতে হলে যে-কাউকে একটি বিশেষ শর্ত পূরণ করতে হবে। আর তা হলো তার মৃত্যুটা হতে হবে চরম দুর্ভাগ্যজনক কোনো দিনে।
বিচারের দায়িত্ব পেলেন জোনা পুত্র সেন্ট পিটার। যথারীতি তিনি স্বর্গের দুয়ারে বসে আছেন। লোকজন লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে স্বর্গের টিকিট পাওয়ার অপেক্ষায়। লাইনের প্রথম লোকটা মধ্যবয়স্ক, মাথাভর্তি উসকো-খুসকো চুল। সেন্ট পিটার তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘বলো, তোমার জীবনের শেষ দিনটা কেমন ছিল?’
লোকটা বলল, ‘ভয়ঙ্কর! আমার বউয়ের বয়স ছিল আমার চেয়ে অনেক কম। তার ওপর বেজায় সুন্দরী। প্রতিবেশী অনেকেরই কুনজর ছিল তার দিকে। তাই তাকে চোখে চোখে রাখতে হতো। একসময় আমার সন্দেহ হলো এক প্রতিবেশীর সাথে তার ইটিশপিটিশ চলছে। তক্কে তক্কে রইলাম। একদিন বউকে শহরের বাইরে যাবার কথা বলে বাসা থেকে বের হলাম। আমি নিশ্চিত ছিলাম সে এই সুযোগটা নেবে। তাই তাড়াতাড়িই বাসায় চলে এলাম সেদিন। কিন্তু সারা বাড়ি তন্ন তন্ন করে খুঁজেও ওই রাস্কেলটাকে দেখতে পেলাম না। শেষে খুঁজতে খুঁজতে ব্যালকনিতে গেলাম। আমাদের ফ্ল্যাটটা ছিল বারো তলায়। ও মাগো, দেখি কি সেই খচ্চরটা ব্যালকনি থেকে ঝুলছে! আমি ঘরের ভেতর থেকে ইয়া বড় একটা হাতুড়ি নিয়ে এসে পেটাতে শুরু করলাম তার হাতের ওপর। সে গর্দভটা নিচে পড়ল ঠিকই, কিন্তু একটা ঝোপের ওপর গিয়ে পড়ল। তাই এবার ঘরের ভেতর গিয়ে আস্ত ফ্রিজটা তুলে এনে তার ওপর ছুড়ে মারলাম। অব্যর্থ নিশানা! ওটা সোজা তার মাথার ওপর গিয়ে পড়ল। কিন্তু এ ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় আমার হার্ট অ্যাটাক হলো। আমিও মর্ত্যের মায়া কাটিয়ে আমি সোজা চলে এলাম এখানে।’
সেন্ট পিটার অস্বীকার করতে পারলেন না যে এটা সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক দিন ছিল তার জন্য। তাই অন্যায় করা সত্ত্বেও তাকে ভেতরে ঢুকতে দিলেন। ওইদিন আরও যাদের মৃত্যু হয়েছিল তারা অপেক্ষা করছে কখন টিকিট পাবে। তিনি লাইনের দ্বিতীয় ব্যক্তিটিকে ডাকলেন।
‘সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক ছিল সেই দিনটি।’ দ্বিতীয় ব্যক্তিটি বলল। ‘আমি আমার তেরো তলার ফ্ল্যাটের ব্যালকনিতে সামান্য ব্যায়াম করছিলাম। অসাবধানে উবু হতে গিয়ে রেলিং টপকে পড়ে যাই। যা হোক, কোনোমতে আমি নিচের ফ্ল্যাটের ব্যালকনি থেকে ঝুলছিলাম। কিন্তু কোত্থেকে এক উন্মাদ এসে আমার হাতের ওপর হাতুড়ি দিয়ে পেটাতে শুরু করে। সৌভাগ্যবশত আমি কিছু ঝোপঝাড়ের ওপর গিয়ে পড়ি। কিন্তু, ওই পাগলটা এর পর আমার ওপর একটা ফ্রিজ ছুড়ে মারে!’
সেন্ট পিটার মুখ টিপে হাসলেন। তবে ঢুকতে দিলেন একেও। মনে মনে ভাবছেন তাঁর কাজটা সত্যিই উপভোগ্য হয়ে উঠতে শুরু করেছে। ‘তোমার জীবনের শেষ দিনটা কেমন কেটেছিল?’ তিনি জিজ্ঞেস করলেন লাইনে দাঁড়ানো তৃতীয় ব্যক্তিটিকে।
‘বলছি। ছবিটা মনে মনে কল্পনা করুন, আমি নগ্ন, একটা ফ্রিজের ভেতর লুকিয়ে আছি....’
লিখেছেন কুটুমবাড়ি (তারিখ: রবি, ২০১০-০৬-২৭ ১৭:৪৪)@ সচলায়তন
ক্যাটেগরী: গল্প | সাহিত্য | রম্যরচনা | অণুগল্প | স্বর্গ | যুবা (১৮ বছর বা তদুর্দ্ধ)
স্বর্গে ভিড় খুব বেড়ে গিয়েছিল। একটি সিদ্ধান্ত নেয়া হলো শুধু এক দিনের জন্য। ওইদিন স্বর্গে ঢুকতে হলে যে-কাউকে একটি বিশেষ শর্ত পূরণ করতে হবে। আর তা হলো তার মৃত্যুটা হতে হবে চরম দুর্ভাগ্যজনক কোনো দিনে।
বিচারের দায়িত্ব পেলেন জোনা পুত্র সেন্ট পিটার। যথারীতি তিনি স্বর্গের দুয়ারে বসে আছেন। লোকজন লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে স্বর্গের টিকিট পাওয়ার অপেক্ষায়। লাইনের প্রথম লোকটা মধ্যবয়স্ক, মাথাভর্তি উসকো-খুসকো চুল। সেন্ট পিটার তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘বলো, তোমার জীবনের শেষ দিনটা কেমন ছিল?’
লোকটা বলল, ‘ভয়ঙ্কর! আমার বউয়ের বয়স ছিল আমার চেয়ে অনেক কম। তার ওপর বেজায় সুন্দরী। প্রতিবেশী অনেকেরই কুনজর ছিল তার দিকে। তাই তাকে চোখে চোখে রাখতে হতো। একসময় আমার সন্দেহ হলো এক প্রতিবেশীর সাথে তার ইটিশপিটিশ চলছে। তক্কে তক্কে রইলাম। একদিন বউকে শহরের বাইরে যাবার কথা বলে বাসা থেকে বের হলাম। আমি নিশ্চিত ছিলাম সে এই সুযোগটা নেবে। তাই তাড়াতাড়িই বাসায় চলে এলাম সেদিন। কিন্তু সারা বাড়ি তন্ন তন্ন করে খুঁজেও ওই রাস্কেলটাকে দেখতে পেলাম না। শেষে খুঁজতে খুঁজতে ব্যালকনিতে গেলাম। আমাদের ফ্ল্যাটটা ছিল বারো তলায়। ও মাগো, দেখি কি সেই খচ্চরটা ব্যালকনি থেকে ঝুলছে! আমি ঘরের ভেতর থেকে ইয়া বড় একটা হাতুড়ি নিয়ে এসে পেটাতে শুরু করলাম তার হাতের ওপর। সে গর্দভটা নিচে পড়ল ঠিকই, কিন্তু একটা ঝোপের ওপর গিয়ে পড়ল। তাই এবার ঘরের ভেতর গিয়ে আস্ত ফ্রিজটা তুলে এনে তার ওপর ছুড়ে মারলাম। অব্যর্থ নিশানা! ওটা সোজা তার মাথার ওপর গিয়ে পড়ল। কিন্তু এ ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় আমার হার্ট অ্যাটাক হলো। আমিও মর্ত্যের মায়া কাটিয়ে আমি সোজা চলে এলাম এখানে।’
সেন্ট পিটার অস্বীকার করতে পারলেন না যে এটা সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক দিন ছিল তার জন্য। তাই অন্যায় করা সত্ত্বেও তাকে ভেতরে ঢুকতে দিলেন। ওইদিন আরও যাদের মৃত্যু হয়েছিল তারা অপেক্ষা করছে কখন টিকিট পাবে। তিনি লাইনের দ্বিতীয় ব্যক্তিটিকে ডাকলেন।
‘সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক ছিল সেই দিনটি।’ দ্বিতীয় ব্যক্তিটি বলল। ‘আমি আমার তেরো তলার ফ্ল্যাটের ব্যালকনিতে সামান্য ব্যায়াম করছিলাম। অসাবধানে উবু হতে গিয়ে রেলিং টপকে পড়ে যাই। যা হোক, কোনোমতে আমি নিচের ফ্ল্যাটের ব্যালকনি থেকে ঝুলছিলাম। কিন্তু কোত্থেকে এক উন্মাদ এসে আমার হাতের ওপর হাতুড়ি দিয়ে পেটাতে শুরু করে। সৌভাগ্যবশত আমি কিছু ঝোপঝাড়ের ওপর গিয়ে পড়ি। কিন্তু, ওই পাগলটা এর পর আমার ওপর একটা ফ্রিজ ছুড়ে মারে!’
সেন্ট পিটার মুখ টিপে হাসলেন। তবে ঢুকতে দিলেন একেও। মনে মনে ভাবছেন তাঁর কাজটা সত্যিই উপভোগ্য হয়ে উঠতে শুরু করেছে। ‘তোমার জীবনের শেষ দিনটা কেমন কেটেছিল?’ তিনি জিজ্ঞেস করলেন লাইনে দাঁড়ানো তৃতীয় ব্যক্তিটিকে।
‘বলছি। ছবিটা মনে মনে কল্পনা করুন, আমি নগ্ন, একটা ফ্রিজের ভেতর লুকিয়ে আছি....’
প্রমিত বাংলা বানানরীতি, প্রশ্ন অপরিমিত : প্রয়োজন, দায়, না বাতুলতা?
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: মঙ্গল, ২০১০-০৬-২২ ০৮:০৭)@ সচলায়তন
ক্যাটেগরী: ব্লগরব্লগর
‘বাংলা একাডেমী’ প্রবর্তিত প্রমিত বাংলা বানানরীতি সম্বন্ধে না জেনেই তা উড়িয়ে দেবার একটা প্রবল প্রবণতা রয়েছে আমাদের মধ্যে। বাংলা ভাষায় একটা প্রমিত বানানরীতি যে প্রায় দাঁড়িয়ে গেছে তা মেনে নিতেও আমাদের ভীষণ আপত্তি। একটা ভাষা যদি তার সব ব্যবহারকারীর জন্য হয় তো তার বানানের ক্ষেত্রে একটা মানরীতিই সব থেকে নিরাপদ যা সকলের জন্য সহজবোধ্য। প্রমিত বানানরীতি অনুসরণ না করার অন্ধ প্রতিজ্ঞা ও গোয়ার্তুমি বাংলাকে একটা জগাখিচুড়ি ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে ছেড়েছে। ভাষার ক্ষেত্রে হয়তো রীতি তৈরিই হয় ভাঙার জন্য, তাতে হয়তো রীতিরই লাভ, কারণ সে রীতির গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু তা যাচাই হয়ে যায় এতে। কিন্তু তা যদি হয় বিচার-বিবেচনাহীন, অগ্রহণযোগ্য রীতির রক্ষাকবচ, তাহলে বাংলা ভাষার মানদণ্ড কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা ভেবে দেখবার বিষয়।
প্রথমেই বলে নিই অতিরিক্ত বানান-চিন্তাকে যাঁরা শুচিবায়ুগ্রস্ততা বলে পাশ কাটিয়ে যেতে চান আমি তাঁদের দলে নই। মানসম্পন্ন লেখাও ভুল/অপ্রমিত বানানের কোপে পড়ে পাঠযোগ্যতা হারিয়ে ফেলতে পারে—এই আমার বিশ্বাস। হ্যাঁ, ভুল বানান থাকবে, তবে তা বড়জোর ডায়েরির পাতায় বা বাজারের ফর্দতেই সীমাবদ্ধ থাকা উচিত। সাইনবোর্ড-ফেস্টুন-বিজ্ঞাপন কি গণমাধ্যম বা সাহিত্য চর্চার ক্ষেত্রে ভুল বানানের দৌরাত্ম কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না।
যাঁরা ব্লগে লেখালেখি করছেন, তাঁরা কতখানি সচেতন বানানের বিষয়ে? আমি শব্দপ্রেমী, বানান ভুল আমাকে পীড়িত করে। হয়তো আমার মতো অনেক পাঠকই বিরক্ত হন। তবে ভুল তো ভুলই, আমার আপত্তি ইচ্ছাকৃত ভুল বা অপ্রমিত বানানে।
অনেকেই প্রমিত বানানরীতিকে বাড়তি দায় বলে মনে করতে পারেন। যেখানে বাংলায় শুদ্ধ বানানে লেখাই কষ্টকর, সেখানে প্রমিত বানানরীতি চাপিয়ে দেওয়াটা বাড়াবাড়ি মনে হতে পারে। তা ছাড়া প্রমিত বানানরীতি ভাষাকে গণ্ডিবদ্ধ করে ফেলবে বলেও অনেকের আশঙ্কা থাকতে পারে। এ আশঙ্কা কতটা যৌক্তিক আর কতটা অজ্ঞতা/উন্নাসিকতার পরিচয় তা নির্ণয় করার জন্যই এই আপাত বেহুদা লেখাটি পোস্টাতে হলো।
বাংলা ভাষায় পণ্ডিতের সংখ্যা বেশি, তাই সবাই নিজস্ব বানানরীতি রচনা করেন, আর বাংলা ভাষার/বানানের কর্ণধার কর্তৃক প্রণীত প্রমিত বানানরীতিকে থোরাই কেয়ার করেন। যদিও প্রমিতকরণের জন্য যে পর্ষদ গঠন করা হয়েছিল, সেই পর্ষদও কিছু কিছু বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি। তেমনি জাতীয় শিক্ষাবোর্ডের বানানরীতিও অনেক ক্ষেত্রে প্রমিত বানানরীতির অনুরূপ নয়। পাশাপাশি পত্রিকাগুলোর যথেচ্ছাচার তো আছেই। এমন অবস্থায় বাংলা ভাষা ব্যবহারকারীরা তো দিশেহারা হবেনই।
তবে আশার কথা হলো, যথেচ্ছাচার সত্ত্বেও ১৯৯৪ সালের জানুয়ারি মাসে ‘বাংলা একাডেমী’ বানান বিষয়ে যে নীতিমালাটি চূড়ান্ত করে তা পরবর্তীকালে পত্র-পত্রিকাগুলোকে অনুসরণ করতে দেখা যায়, যদিও পুরোপুরি নয় [২০০০ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রকাশিত 'বাংলা একাডেমী ব্যবহারিক বাংলা অভিধানে'র (পরিমার্জিত সংস্করণ) ‘পরিশিষ্ট’ হিসেবে মুদ্রণের পূর্বে ওই বছরেরই নভেম্বর মাসে ‘প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম’ পুনরায় সংশোধন করা হয়। এখন প্রমিত বানানরীতির এই রূপটিই চালু আছে]। যতটুকু ব্যত্যয় চোখে পড়ে তা হতে পারে অজ্ঞাতসারে, অথবা 'নিজস্ব স্টাইল’-এর কারণে। প্রমিত বানানরীতি গ্রহণ ও ‘কোনো অসঙ্গতি থেকে থাকলে’ তা সংশোধনের জন্য একটা ঐকমত্য প্রয়োজন। সবাই প্রমিত বানানরীতিকে গ্রহণ করলে আপনা-আপনিই তা জনপ্রিয় হয়ে উঠবে ও চর্চিত হবে।
নিচে প্রশ্নোত্তর-আকারে 'বাংলা একাডেমী' প্রণীত প্রমিত বানানরীতি অনুসরণের যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করা হলো। ভবিষ্যতে প্রমিত বানানের নিয়মসমূহ ও সেগুলো মেনে চলায় আমাদের কী লাভ হবে তা নিয়ে আলোচনা করার ইচ্ছা রইল। দু-একটি নিয়মে আমার নিজেরও আপত্তি আছে, সেগুলোও আলোচনায় উঠে আসবে। এ ছাড়া সবার সম্মিলিত যুক্তিতর্কের মাধ্যমে আমরা প্রত্যেকেই কিছু-না-কিছু অজানা বিষয় জানতে পারব ও নিজেদের কোনো ভুল থেকে থাকলে তা সংশোধন করতে পারব বলে আশা করছি। যাঁরা কোনো-না-কোনোভাবে লেখালেখির সাথে যুক্ত তাঁদের সবাইকে মতামত জানাতে আহ্বান জানিয়ে রাখছি এই সুযোগে।
প্রশ্ন : ১. প্রমিত বাংলা বানানরীতি প্রণয়নের আদৌ কোনো প্রয়োজন ছিল কি?
উত্তর : অনেক চলমান ও বর্ধিষ্ণু ভাষাতেই দীর্ঘকাল জুড়ে ধীরে ধীরে বানানের কিছু কিছু পরিবর্তন হতে দেখা যায়। তখন একসময়ে বানানের নিয়ম নতুন করে বেঁধে দেওয়ার বা সূত্রবদ্ধ করার প্রয়োজন হয়। এ-যাবৎ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়-নির্দেশিত নিয়ম আমরা অনুসরণ করে চলেছি। কিন্তু আধুনিক কালের দাবি অনুযায়ী, নানা বানানের যেসব বিশৃঙখলা ও বিভ্রান্তি আমরা দেখছি সেই পরিপ্রেক্ষিতে বানানের নিয়মগুলিকে আর একবার সূত্রবদ্ধ করার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। বিশেষত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়-নির্দেশিত নিয়মে বিকল্প ছিল বেশি। বিকল্প হয়তো পরিহার করা যাবে না, কিন্তু যথাসাধ্য তা কমিয়ে আনা দরকার। এইসব কারণে ‘বাংলা একাডেমী’ বাংলা বানানের বর্তমান নিয়ম নির্ধারণ করছে।
প্রশ্ন : ২. একই শব্দ একাধিক বানানরীতিতে লিখতে অসুবিধা কোথায়? মানুষের ভাষায় বৈচিত্র্য/ফ্লেক্সিব্লিটি থাকা প্রয়োজন, ওতে ভাষার প্রাণ বাড়ে।
উত্তর : প্রতি ভাষারই একটা স্ট্যান্ডার্ড বানানরীতি থাকে- খুব সহজ উদাহরণ হলো ইংরেজি; হয় ইউএস অথবা ব্রিটিশ রীতি, এর বাইরে আরেকটা রীতি তারা অনুসরণ করে কি না তা আমার জানা নেই। তাই বলে সে ভাষায় বৈচিত্র্য/ফ্লেক্সিব্লিটি-র কিছুমাত্র ঘাটতি আছে কি?
বাংলা ভাষায় হয়তো শব্দভাণ্ডার যথেষ্ট সমৃদ্ধ নয়। তবে বানানরীতিতে ভিন্নতা আনাটা কিছুতেই এ সমস্যার সমাধান হতে পারে না। তাতে বিভ্রান্তি বাড়বে বৈ কমবে না।
আমি মনে করি বানানের বিষয়টা একান্তই ভাষাতত্ত্ববিদের কাজ, তবে তারা কিন্তু কিছুতেই ভাষার গতি-প্রকৃতি নির্ধারণ করেন না, সে এক্তিয়ারও তাদের নেই। ভাষা পরিবর্তিত হয় গণ-মানুষের হাতে, লেখক-কবিরা তাতে আরও বেশি প্রাণ সঞ্চার করেন মাত্র। প্রমিত বানানরীতি লেখকের পায়ে বেড়ি পড়ানোর জন্য তৈরি করা হয়নি, এটা করা হয়েছে ভাষার শুদ্ধতা রক্ষা এবং সাধারণ মানুষের সুবিধার কথা ভেবেই।
ভাষাটা বিভিন্ন ব্যক্তির প্রকাশভঙ্গির ক্ষেত্রে বিভিন্ন হতে পারে এবং এটা হওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু মৌলিক বানানের ক্ষেত্রটা তো অভিন্ন করা যায়। এ নিয়মটা সবাই অনুসরণ করলে হয়তো পাঠক বিভ্রান্তিতে পড়বেন না এবং ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রে একটা সমতা বজায় থাকবে।
প্রশ্ন : ৩. ভাষার ক্ষেত্রে কিছু জিনিসকে ‘প্রমিত’ ঘোষণার একটা বড় সমস্যা হচ্ছে একই সঙ্গে অনেক কিছুকে ‘অপ্রমিত’ ঘোষণা করার ভার।
উত্তর : কিছু জিনিসকে ‘প্রমিত’ ঘোষণায় কোনো সমস্যা দেখছি না। হ্যাঁ, এর জন্য আরও গবেষণা প্রয়োজন হবে এ কথা সত্য। কিন্তু এটা তো চলমান প্রক্রিয়া, তাই না? এ পর্যন্ত যেসব বানান প্রমিত হিসেবে মোটামুটি প্রণিধানযোগ্য হয়েছে সেগুলোকে তো আমরা মেনে নিতে পারি এবং অনুসরণ করতে পারি। আর যেসব বানানকে শুদ্ধ/গ্রহণযোগ্য হিসেবে প্রমাণ করা যাচ্ছে না সেগুলো সবাই বর্জন করলে আপনা-আপনিই কালপরিক্রমায় হারিয়ে যাবে, আলাদা করে ‘অপ্রমিত’ ঘোষণার কোনো প্রয়োজন দেখছি না।
প্রশ্ন : ৪. প্রমিত বানানের আগে রচিত হাজার হাজার বইয়ের কী হবে?
উত্তর : ভাষা একটি চলমান বিষয়। তা না-হলে ৫০ বছর আগের ভাষা আর বর্তমান ভাষা একই রকম হতো। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস হাজার বছরের পুরোনো। পুরোনো সেসব বইয়ের বানান সংস্কারের কথা কেউই বলছেন না, বরং সেই অমূল্য সাহিত্যভাণ্ডার যেমন আছে তেমন থাকাটাই সবার কাম্য। সেই এত দিন ধরে বাংলা বানান যে ক্রমাগত রূপ পরিবর্তন করে চলেছে তা বাংলা ভাষার জীবনীশক্তি এবং প্রবহমানতারই বহিঃপ্রকাশ। তাহলে এ-প্রজন্ম ঠিক কোন বানানরীতিটি অনুসরণ করবে তা নির্ধারণের প্রয়োজনীয়তা নিশ্চয়ই কেউ অস্বীকার করতে পারবেন না। ঠিক এখানেই প্রমিত বানানরীতি মেনে নেওয়ার প্রশ্নটি আসছে।
প্রশ্ন : ৫. রীতি যে সবাইকে মানতেই হবে এমন নয়। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় রীতির অনেকগুলো বানান মানতেন না।
উত্তর : প্রমিত বানানরীতির কোনো সুনির্দিষ্ট নিয়মের বিপক্ষে আপনার যদি কোনো যু্ক্তিগ্রাহ্য মতামত থাকে তাহলে ভিন্ন কথা। নতুবা কেন মেনে নেবেন না? আপনার এ ধরনের ভূমিকায় আপনার প্রিয় মাতৃভাষাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে, আশা করি শুধুমাত্র ‘রীতি ভাঙার জন্য রীতি অমান্য’ করার কাজটি করবেন না। রীতি যদি ভাঙতেই হয়, তাহলে তথাকথিত যেসব শুদ্ধ (কিন্তু অপ্রমাণিত ও কম গ্রহণযোগ্য) রীতি এখনও আমাদের শৃঙ্খলিত করে রেখেছে সেগুলি ভাঙুন।
প্রশ্ন : ৬. ভাষা ব্যবহারকারীদের অন্তত অর্ধেক নিজের সারা শিক্ষাজীবন এই প্রমিত বানানরীতি ছাড়াই পার করে আসেননি? হঠাৎ কোনো প্রতিষ্ঠান বা চার-পাঁচজন মানুষ লাখ লাখ লোকের ২০ বছরের শিক্ষাকে ভুল বলবার ধৃষ্টতা দেখাতে পারে না।
উত্তর : ‘বাংলা একাডেমী’ কোনো ভুঁইফোড় প্রতিষ্ঠান নয়, আমাদের জাতীয় পর্যায়ের সেরা মননশীল ব্যক্তিরা প্রমিত বানানরীতি প্রণয়নের সাথে জড়িত। মানা না-মানার দায়িত্ব আপনার। যিনি না-মানেন তিনি বুঝেই না-মানেন, আর যিনি না-বুঝে না-মানেন, তিনি নিঃসন্দেহে ভুলবশত না-মানেন। ‘বাংলা একাডেমী’র প্রমিত বানানরীতির বাইরের বানানকে যে-কেউ ভুল বানান বলে চ্যালেঞ্জ করতে পারবেন সহজেই, অন্তত আমি তা-ই মনে করি।
প্রশ্ন : ৭. ‘বাংলা একাডমী’ যে বিভ্রান্ত তার প্রমাণ তার নামের ‘একাডেমী’ বানানটিই।
উত্তর : কোনো ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের নামের ক্ষেত্রে প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম প্রযোজ্য নয়। কাজেই ‘বাংলা একাডেমী’ তার নাম পরিবর্তন করতে বাধ্য নয়। হঠাৎ করে এত পুরোনো একটি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে নাম পরিবর্তন করা সম্ভব কি না তাও ভেবে দেখবার বিষয়। তবে বিভ্রান্তি এড়ানোর জন্য আমি ‘বাংলা একাডেমী’র নাম পরিবর্তনের পক্ষে। এবং অদূর ভবিষ্যতে হয়তো আমরা তা-ই দেখতে পাব।
***
বাংলা ভাষার মতো এতগুলো ভিন্ন ভিন্ন বানানরীতি বিশ্বের আর কোনো ভাষায় আছে কি? আরও পরিতাপের বিষয় এই ভিন্ন ভিন্ন বানানকে শুদ্ধ বানানের ট্যাগ পরিয়ে রাখা হয়েছে আজ অব্দি। সত্যিকার অর্থে এতে কি বাংলা ভাষার কোনো লাভ হয়েছে পাঠকদের বিভ্রান্ত করা ছাড়া? বাংলাদেশের ভাষাতত্ত্ববিদ ও অভিধানবিশারদেরা কেউ কি শুনছেন আমাদের কথা? আমাদের সাধারণ পাঠকদের এই আর্তনাদ কি পৌঁছাচ্ছে আপনাদের কানে? আমরা প্রমিত বানানরীতি মেনে চলতে চাই, প্লিজ হেল্প করুন আমাদেরকে।
(চলবে...)
*তথ্যসূত্র ও কৃতজ্ঞতা : এই লেখাটির বেশ কিছু লাইন বিভিন্ন বাংলা ব্লগ সাইটের নাম না-জানা ব্লগারদের সাথে কথোপকথন ও ‘বাংলা একাডেমী ব্যবহারিক অভিধান’ থেকে সরাসরি কোট করা হয়েছে।
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: মঙ্গল, ২০১০-০৬-২২ ০৮:০৭)@ সচলায়তন
ক্যাটেগরী: ব্লগরব্লগর
‘বাংলা একাডেমী’ প্রবর্তিত প্রমিত বাংলা বানানরীতি সম্বন্ধে না জেনেই তা উড়িয়ে দেবার একটা প্রবল প্রবণতা রয়েছে আমাদের মধ্যে। বাংলা ভাষায় একটা প্রমিত বানানরীতি যে প্রায় দাঁড়িয়ে গেছে তা মেনে নিতেও আমাদের ভীষণ আপত্তি। একটা ভাষা যদি তার সব ব্যবহারকারীর জন্য হয় তো তার বানানের ক্ষেত্রে একটা মানরীতিই সব থেকে নিরাপদ যা সকলের জন্য সহজবোধ্য। প্রমিত বানানরীতি অনুসরণ না করার অন্ধ প্রতিজ্ঞা ও গোয়ার্তুমি বাংলাকে একটা জগাখিচুড়ি ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে ছেড়েছে। ভাষার ক্ষেত্রে হয়তো রীতি তৈরিই হয় ভাঙার জন্য, তাতে হয়তো রীতিরই লাভ, কারণ সে রীতির গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু তা যাচাই হয়ে যায় এতে। কিন্তু তা যদি হয় বিচার-বিবেচনাহীন, অগ্রহণযোগ্য রীতির রক্ষাকবচ, তাহলে বাংলা ভাষার মানদণ্ড কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা ভেবে দেখবার বিষয়।
প্রথমেই বলে নিই অতিরিক্ত বানান-চিন্তাকে যাঁরা শুচিবায়ুগ্রস্ততা বলে পাশ কাটিয়ে যেতে চান আমি তাঁদের দলে নই। মানসম্পন্ন লেখাও ভুল/অপ্রমিত বানানের কোপে পড়ে পাঠযোগ্যতা হারিয়ে ফেলতে পারে—এই আমার বিশ্বাস। হ্যাঁ, ভুল বানান থাকবে, তবে তা বড়জোর ডায়েরির পাতায় বা বাজারের ফর্দতেই সীমাবদ্ধ থাকা উচিত। সাইনবোর্ড-ফেস্টুন-বিজ্ঞাপন কি গণমাধ্যম বা সাহিত্য চর্চার ক্ষেত্রে ভুল বানানের দৌরাত্ম কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না।
যাঁরা ব্লগে লেখালেখি করছেন, তাঁরা কতখানি সচেতন বানানের বিষয়ে? আমি শব্দপ্রেমী, বানান ভুল আমাকে পীড়িত করে। হয়তো আমার মতো অনেক পাঠকই বিরক্ত হন। তবে ভুল তো ভুলই, আমার আপত্তি ইচ্ছাকৃত ভুল বা অপ্রমিত বানানে।
অনেকেই প্রমিত বানানরীতিকে বাড়তি দায় বলে মনে করতে পারেন। যেখানে বাংলায় শুদ্ধ বানানে লেখাই কষ্টকর, সেখানে প্রমিত বানানরীতি চাপিয়ে দেওয়াটা বাড়াবাড়ি মনে হতে পারে। তা ছাড়া প্রমিত বানানরীতি ভাষাকে গণ্ডিবদ্ধ করে ফেলবে বলেও অনেকের আশঙ্কা থাকতে পারে। এ আশঙ্কা কতটা যৌক্তিক আর কতটা অজ্ঞতা/উন্নাসিকতার পরিচয় তা নির্ণয় করার জন্যই এই আপাত বেহুদা লেখাটি পোস্টাতে হলো।
বাংলা ভাষায় পণ্ডিতের সংখ্যা বেশি, তাই সবাই নিজস্ব বানানরীতি রচনা করেন, আর বাংলা ভাষার/বানানের কর্ণধার কর্তৃক প্রণীত প্রমিত বানানরীতিকে থোরাই কেয়ার করেন। যদিও প্রমিতকরণের জন্য যে পর্ষদ গঠন করা হয়েছিল, সেই পর্ষদও কিছু কিছু বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি। তেমনি জাতীয় শিক্ষাবোর্ডের বানানরীতিও অনেক ক্ষেত্রে প্রমিত বানানরীতির অনুরূপ নয়। পাশাপাশি পত্রিকাগুলোর যথেচ্ছাচার তো আছেই। এমন অবস্থায় বাংলা ভাষা ব্যবহারকারীরা তো দিশেহারা হবেনই।
তবে আশার কথা হলো, যথেচ্ছাচার সত্ত্বেও ১৯৯৪ সালের জানুয়ারি মাসে ‘বাংলা একাডেমী’ বানান বিষয়ে যে নীতিমালাটি চূড়ান্ত করে তা পরবর্তীকালে পত্র-পত্রিকাগুলোকে অনুসরণ করতে দেখা যায়, যদিও পুরোপুরি নয় [২০০০ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রকাশিত 'বাংলা একাডেমী ব্যবহারিক বাংলা অভিধানে'র (পরিমার্জিত সংস্করণ) ‘পরিশিষ্ট’ হিসেবে মুদ্রণের পূর্বে ওই বছরেরই নভেম্বর মাসে ‘প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম’ পুনরায় সংশোধন করা হয়। এখন প্রমিত বানানরীতির এই রূপটিই চালু আছে]। যতটুকু ব্যত্যয় চোখে পড়ে তা হতে পারে অজ্ঞাতসারে, অথবা 'নিজস্ব স্টাইল’-এর কারণে। প্রমিত বানানরীতি গ্রহণ ও ‘কোনো অসঙ্গতি থেকে থাকলে’ তা সংশোধনের জন্য একটা ঐকমত্য প্রয়োজন। সবাই প্রমিত বানানরীতিকে গ্রহণ করলে আপনা-আপনিই তা জনপ্রিয় হয়ে উঠবে ও চর্চিত হবে।
নিচে প্রশ্নোত্তর-আকারে 'বাংলা একাডেমী' প্রণীত প্রমিত বানানরীতি অনুসরণের যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করা হলো। ভবিষ্যতে প্রমিত বানানের নিয়মসমূহ ও সেগুলো মেনে চলায় আমাদের কী লাভ হবে তা নিয়ে আলোচনা করার ইচ্ছা রইল। দু-একটি নিয়মে আমার নিজেরও আপত্তি আছে, সেগুলোও আলোচনায় উঠে আসবে। এ ছাড়া সবার সম্মিলিত যুক্তিতর্কের মাধ্যমে আমরা প্রত্যেকেই কিছু-না-কিছু অজানা বিষয় জানতে পারব ও নিজেদের কোনো ভুল থেকে থাকলে তা সংশোধন করতে পারব বলে আশা করছি। যাঁরা কোনো-না-কোনোভাবে লেখালেখির সাথে যুক্ত তাঁদের সবাইকে মতামত জানাতে আহ্বান জানিয়ে রাখছি এই সুযোগে।
প্রশ্ন : ১. প্রমিত বাংলা বানানরীতি প্রণয়নের আদৌ কোনো প্রয়োজন ছিল কি?
উত্তর : অনেক চলমান ও বর্ধিষ্ণু ভাষাতেই দীর্ঘকাল জুড়ে ধীরে ধীরে বানানের কিছু কিছু পরিবর্তন হতে দেখা যায়। তখন একসময়ে বানানের নিয়ম নতুন করে বেঁধে দেওয়ার বা সূত্রবদ্ধ করার প্রয়োজন হয়। এ-যাবৎ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়-নির্দেশিত নিয়ম আমরা অনুসরণ করে চলেছি। কিন্তু আধুনিক কালের দাবি অনুযায়ী, নানা বানানের যেসব বিশৃঙখলা ও বিভ্রান্তি আমরা দেখছি সেই পরিপ্রেক্ষিতে বানানের নিয়মগুলিকে আর একবার সূত্রবদ্ধ করার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। বিশেষত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়-নির্দেশিত নিয়মে বিকল্প ছিল বেশি। বিকল্প হয়তো পরিহার করা যাবে না, কিন্তু যথাসাধ্য তা কমিয়ে আনা দরকার। এইসব কারণে ‘বাংলা একাডেমী’ বাংলা বানানের বর্তমান নিয়ম নির্ধারণ করছে।
প্রশ্ন : ২. একই শব্দ একাধিক বানানরীতিতে লিখতে অসুবিধা কোথায়? মানুষের ভাষায় বৈচিত্র্য/ফ্লেক্সিব্লিটি থাকা প্রয়োজন, ওতে ভাষার প্রাণ বাড়ে।
উত্তর : প্রতি ভাষারই একটা স্ট্যান্ডার্ড বানানরীতি থাকে- খুব সহজ উদাহরণ হলো ইংরেজি; হয় ইউএস অথবা ব্রিটিশ রীতি, এর বাইরে আরেকটা রীতি তারা অনুসরণ করে কি না তা আমার জানা নেই। তাই বলে সে ভাষায় বৈচিত্র্য/ফ্লেক্সিব্লিটি-র কিছুমাত্র ঘাটতি আছে কি?
বাংলা ভাষায় হয়তো শব্দভাণ্ডার যথেষ্ট সমৃদ্ধ নয়। তবে বানানরীতিতে ভিন্নতা আনাটা কিছুতেই এ সমস্যার সমাধান হতে পারে না। তাতে বিভ্রান্তি বাড়বে বৈ কমবে না।
আমি মনে করি বানানের বিষয়টা একান্তই ভাষাতত্ত্ববিদের কাজ, তবে তারা কিন্তু কিছুতেই ভাষার গতি-প্রকৃতি নির্ধারণ করেন না, সে এক্তিয়ারও তাদের নেই। ভাষা পরিবর্তিত হয় গণ-মানুষের হাতে, লেখক-কবিরা তাতে আরও বেশি প্রাণ সঞ্চার করেন মাত্র। প্রমিত বানানরীতি লেখকের পায়ে বেড়ি পড়ানোর জন্য তৈরি করা হয়নি, এটা করা হয়েছে ভাষার শুদ্ধতা রক্ষা এবং সাধারণ মানুষের সুবিধার কথা ভেবেই।
ভাষাটা বিভিন্ন ব্যক্তির প্রকাশভঙ্গির ক্ষেত্রে বিভিন্ন হতে পারে এবং এটা হওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু মৌলিক বানানের ক্ষেত্রটা তো অভিন্ন করা যায়। এ নিয়মটা সবাই অনুসরণ করলে হয়তো পাঠক বিভ্রান্তিতে পড়বেন না এবং ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রে একটা সমতা বজায় থাকবে।
প্রশ্ন : ৩. ভাষার ক্ষেত্রে কিছু জিনিসকে ‘প্রমিত’ ঘোষণার একটা বড় সমস্যা হচ্ছে একই সঙ্গে অনেক কিছুকে ‘অপ্রমিত’ ঘোষণা করার ভার।
উত্তর : কিছু জিনিসকে ‘প্রমিত’ ঘোষণায় কোনো সমস্যা দেখছি না। হ্যাঁ, এর জন্য আরও গবেষণা প্রয়োজন হবে এ কথা সত্য। কিন্তু এটা তো চলমান প্রক্রিয়া, তাই না? এ পর্যন্ত যেসব বানান প্রমিত হিসেবে মোটামুটি প্রণিধানযোগ্য হয়েছে সেগুলোকে তো আমরা মেনে নিতে পারি এবং অনুসরণ করতে পারি। আর যেসব বানানকে শুদ্ধ/গ্রহণযোগ্য হিসেবে প্রমাণ করা যাচ্ছে না সেগুলো সবাই বর্জন করলে আপনা-আপনিই কালপরিক্রমায় হারিয়ে যাবে, আলাদা করে ‘অপ্রমিত’ ঘোষণার কোনো প্রয়োজন দেখছি না।
প্রশ্ন : ৪. প্রমিত বানানের আগে রচিত হাজার হাজার বইয়ের কী হবে?
উত্তর : ভাষা একটি চলমান বিষয়। তা না-হলে ৫০ বছর আগের ভাষা আর বর্তমান ভাষা একই রকম হতো। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস হাজার বছরের পুরোনো। পুরোনো সেসব বইয়ের বানান সংস্কারের কথা কেউই বলছেন না, বরং সেই অমূল্য সাহিত্যভাণ্ডার যেমন আছে তেমন থাকাটাই সবার কাম্য। সেই এত দিন ধরে বাংলা বানান যে ক্রমাগত রূপ পরিবর্তন করে চলেছে তা বাংলা ভাষার জীবনীশক্তি এবং প্রবহমানতারই বহিঃপ্রকাশ। তাহলে এ-প্রজন্ম ঠিক কোন বানানরীতিটি অনুসরণ করবে তা নির্ধারণের প্রয়োজনীয়তা নিশ্চয়ই কেউ অস্বীকার করতে পারবেন না। ঠিক এখানেই প্রমিত বানানরীতি মেনে নেওয়ার প্রশ্নটি আসছে।
প্রশ্ন : ৫. রীতি যে সবাইকে মানতেই হবে এমন নয়। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় রীতির অনেকগুলো বানান মানতেন না।
উত্তর : প্রমিত বানানরীতির কোনো সুনির্দিষ্ট নিয়মের বিপক্ষে আপনার যদি কোনো যু্ক্তিগ্রাহ্য মতামত থাকে তাহলে ভিন্ন কথা। নতুবা কেন মেনে নেবেন না? আপনার এ ধরনের ভূমিকায় আপনার প্রিয় মাতৃভাষাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে, আশা করি শুধুমাত্র ‘রীতি ভাঙার জন্য রীতি অমান্য’ করার কাজটি করবেন না। রীতি যদি ভাঙতেই হয়, তাহলে তথাকথিত যেসব শুদ্ধ (কিন্তু অপ্রমাণিত ও কম গ্রহণযোগ্য) রীতি এখনও আমাদের শৃঙ্খলিত করে রেখেছে সেগুলি ভাঙুন।
প্রশ্ন : ৬. ভাষা ব্যবহারকারীদের অন্তত অর্ধেক নিজের সারা শিক্ষাজীবন এই প্রমিত বানানরীতি ছাড়াই পার করে আসেননি? হঠাৎ কোনো প্রতিষ্ঠান বা চার-পাঁচজন মানুষ লাখ লাখ লোকের ২০ বছরের শিক্ষাকে ভুল বলবার ধৃষ্টতা দেখাতে পারে না।
উত্তর : ‘বাংলা একাডেমী’ কোনো ভুঁইফোড় প্রতিষ্ঠান নয়, আমাদের জাতীয় পর্যায়ের সেরা মননশীল ব্যক্তিরা প্রমিত বানানরীতি প্রণয়নের সাথে জড়িত। মানা না-মানার দায়িত্ব আপনার। যিনি না-মানেন তিনি বুঝেই না-মানেন, আর যিনি না-বুঝে না-মানেন, তিনি নিঃসন্দেহে ভুলবশত না-মানেন। ‘বাংলা একাডেমী’র প্রমিত বানানরীতির বাইরের বানানকে যে-কেউ ভুল বানান বলে চ্যালেঞ্জ করতে পারবেন সহজেই, অন্তত আমি তা-ই মনে করি।
প্রশ্ন : ৭. ‘বাংলা একাডমী’ যে বিভ্রান্ত তার প্রমাণ তার নামের ‘একাডেমী’ বানানটিই।
উত্তর : কোনো ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের নামের ক্ষেত্রে প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম প্রযোজ্য নয়। কাজেই ‘বাংলা একাডেমী’ তার নাম পরিবর্তন করতে বাধ্য নয়। হঠাৎ করে এত পুরোনো একটি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে নাম পরিবর্তন করা সম্ভব কি না তাও ভেবে দেখবার বিষয়। তবে বিভ্রান্তি এড়ানোর জন্য আমি ‘বাংলা একাডেমী’র নাম পরিবর্তনের পক্ষে। এবং অদূর ভবিষ্যতে হয়তো আমরা তা-ই দেখতে পাব।
***
বাংলা ভাষার মতো এতগুলো ভিন্ন ভিন্ন বানানরীতি বিশ্বের আর কোনো ভাষায় আছে কি? আরও পরিতাপের বিষয় এই ভিন্ন ভিন্ন বানানকে শুদ্ধ বানানের ট্যাগ পরিয়ে রাখা হয়েছে আজ অব্দি। সত্যিকার অর্থে এতে কি বাংলা ভাষার কোনো লাভ হয়েছে পাঠকদের বিভ্রান্ত করা ছাড়া? বাংলাদেশের ভাষাতত্ত্ববিদ ও অভিধানবিশারদেরা কেউ কি শুনছেন আমাদের কথা? আমাদের সাধারণ পাঠকদের এই আর্তনাদ কি পৌঁছাচ্ছে আপনাদের কানে? আমরা প্রমিত বানানরীতি মেনে চলতে চাই, প্লিজ হেল্প করুন আমাদেরকে।
(চলবে...)
*তথ্যসূত্র ও কৃতজ্ঞতা : এই লেখাটির বেশ কিছু লাইন বিভিন্ন বাংলা ব্লগ সাইটের নাম না-জানা ব্লগারদের সাথে কথোপকথন ও ‘বাংলা একাডেমী ব্যবহারিক অভিধান’ থেকে সরাসরি কোট করা হয়েছে।
বামন ভুত
লিখেছেন কুটুমবাড়ি (তারিখ: বিষ্যুদ, ২০১০-০৬-১৭ ২০:১৭)@ সচলায়তন
ক্যাটেগরী: গল্প | সাহিত্য | ফিকশন | ভুতের গল্প | সববয়সী
একরাশ অস্বস্তি নিয়ে ঘুম ভাঙল রুদ্রের। প্রথমে কিছুক্ষণ কিছুই ঠাহর করে উঠতে পারল না। তারপর চোখ গেল হাতঘড়ির দিকে। সকাল ছয়টা বেজে পনেরো মিনিট। ব্যাপার কি, এত সকালে তো তার ঘুম ভাঙে না! এতক্ষণে ঘরের কোনার গাছটি লক্ষ করল সে। গাছ! তার শোবার ঘরের ভেতর গাছ আসল কোত্থেকে?
সাথে সাথে তড়াক করে বিছানায় উঠে বসল রুদ্র।
ঘরের মধ্যে একটি খুদে মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। মেরেকেটে দেড় ফুট লম্বা হবে কি না সন্দেহ। পরনে কটকটে হলুদ রঙের জ্যাকেট আর নীল প্যান্ট।
- আহ্! ঘুম ভাঙল তাহলে।
রুদ্র কী বলবে ভেবে পেল না। তাকিয়ে আছে হাঁ করে।
- অবাক হচ্ছ? অবশ্য অবাক হবারই কথা। আমি একজন পাতালবাসী বামন ভুত। তুমি এর আগে কখনও ভুত দেখনি মনে হচ্ছে? কী উদ্ভট ব্যাপার!
রুদ্র এখনও বিছানায় বসে আছে। কথার উত্তর দেবে কি, ভয়ে তার ব্রহ্মতালু পর্যন্ত শুকিয়ে গেছে।
- আরে ভেবো না, আগেও আমি এ ধরনের ঘটনা ঘটতে দেখেছি। আমার নাম আভান্তিকা রাপ্টাপুলাস। এসো পরিচিত হই।
বামন ভুতটি এখন তার বিছানার দিকে এগিয়ে আসছে!
রুদ্র খিঁচে বাথরুমের দিকে দৌড় দিল। হৃদপিণ্ড ধুকপুক করছে, তবু এর মধ্যেই তাকিয়ে দেখল পেছন দিকে। না, ভুতটা তাকে তাড়া করছে না। বাথরুমে ঢুকে দড়াম করে দরজা লাগিয়ে দিল ভেতর থেকে।
রাপ্টাপুলাস একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। খুবই অন্যমনস্ক দেখাচ্ছে তাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই অবশ্য মনোযোগ দেয়ার মতো একটা জিনিস খুঁজে পেল সে। ঘরের চতুর্দিকের দেয়ালে দুর্দান্ত সব তৈলচিত্র ঝোলানো। খুটিয়ে খুটিয়ে ছবিগুলো দেখতে শুরু করল সে, যেন কতই না জরুরি কাজ এটা!
***
শেষ বিকেলে রুদ্র আবার পা টিপে টিপে শোবার ঘরে ঢুকল।
“যাক, ফিরে এলে তাহলে!” ভুতটার কণ্ঠ খুশি খুশি শোনাল, “আমি ভেবেছিলাম আর তোমার দেখা পাব না।”
“এসব আমার কল্পনা। তুই মোটেও সত্যি না।” রুদ্র ভয়ে ভয়ে বলল।
রাপ্টাপুলাসকে বেশ হতাশ দেখাল। “শুনে খুশি হতে পারলাম না। তোমার ব্যাপারে আমাকে এমন কিছু কি বলতে শুনেছ?”
“ভাগ!” রুদ্র এবার চিৎকার করল।
রাপ্টাপুলাস তার লম্বা নাকখানি চুলকাল। “এই যে, বর্দ্দা। আমরা এ ব্যাপারে কথা বলতে পারি না?”
জবাবে রুদ্র তার পায়ের জুতো খুলে ছুড়ে মারল রাপ্টাপুলাসের দিকে।
বামন ভুতটি কুঁই কুঁই করে উঠল কুকুরছানার মতো। তবে রুদ্র বুঝতে পারল আসলে এটা তার আতঙ্কিত চিৎকার। কারণ ভুতটি ঝাঁপ দিয়ে গাছের আড়ালে চলে গেছে।
***
রাতটা বাথটাবেই ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিল রুদ্র। বাথরুমের দরজা লক করা আছে ভেতর থেকে। বামন ভুতটা ভেতরে আসতে পারবে না।
ভন্ ভন্ ভনন্। একটা নীল রঙের বড় ডুমো মাছি অনেকক্ষণ ধরে ঘুরছে। একটু পরপরই বসতে চাইছে রুদ্রের নাকের ওপর। এক থাবড়া দিয়ে মাছিটাকে মেরে ফেলল সে। ধুত্তরি! ঘুমটাই চটকে গেল।
বাথটাব থেকে উঠতে যাবে, চারদিকের দৃশ্য দেখে চমকে গেল রুদ্র। বাথরুমটা ঘন ঝোপঝাড়ে ভর্তি হয়ে গেছে। অটুট নিস্তব্ধতা চারদিকে। রুদ্র তার পায়ের দিকে তাকাল। সাদা বাথটাবটা ধীরে ধীরে গাঢ় রং ধারণ করছে! দেখতে দেখতে ওটা ভেঙে গুড়ো গুড়ো হয়ে গেল। রুদ্র নড়ার চেষ্টা করল, কিন্তু কী এক অদ্ভুত জড়তায় যেন পেয়ে বসেছে তাকে। কয়েক মিনিটের ব্যর্থ লড়াই শেষে রুদ্র আর বলতে পারবে না কী হলো তার...
***
“তো,” ডাক্তার মশাই তার লম্বা নাকখানি চুলকালেন। “তোমার সর্বশেষ মতিভ্রম সহিংসতায় রূপ নিয়েছিল?”
রাপ্টাপুলাস মাথা নেড়ে সায় দিল। সে বিছানায় মাথা এলিয়ে পড়ে আছে। পরনে কটকটে হলুদ রঙের জ্যাকেট আর নীল প্যান্ট।
সাইকিয়াট্রিস্ট চিন্তিত ভঙ্গিতে মাথা নাড়লেন। “কিন্তু তুমি ঔষধ খাওয়ার পরেই আবার সব গায়েব হয়ে গেল?”
- হ্যাঁ, কিন্তু মনে হচ্ছিল যেন নিজ হাতে খুন করলাম।
- ও, এজন্যই তুমি ঔষধ খাওয়া বন্ধ রেখেছ?
“হ্যাঁ,” রাপ্টাপুলাসের কণ্ঠে স্পষ্ট অস্বস্তি। “আমার কেন যেন মনে হয় এটা ঠিক না। সবকিছু এত বাস্তব মনে হয়! ঔষধ খেলেই আবার সব কোথায় গায়েব হয়ে যায়! কোথায় যায় তারা?”
ডাক্তার দীর্ঘশ্বাস ফেললেন, “দেখো আভান্তিকা, মতিভ্রমে আসক্ত হওয়ায় লজ্জার কিছু নেই। কিন্তু এই কল্পনার রাজ্যে ভেসে ভেসে আনন্দ খোঁজা কতটুকু যুক্তিযুক্ত তা ভেবে দেখবে আশা করি।”
ভুতের ডাক্তার হাসলেন, “আমি বলতে চাইছি, আমরা সকলেই জানি যে মানুষ বলতে কোনো প্রাণীর অস্তিত্ব নেই। এটা সম্পূর্ণই কাল্পনিক।”
(Matt Tighe রচিত Figment গল্প অবলম্বনে)
লিখেছেন কুটুমবাড়ি (তারিখ: বিষ্যুদ, ২০১০-০৬-১৭ ২০:১৭)@ সচলায়তন
ক্যাটেগরী: গল্প | সাহিত্য | ফিকশন | ভুতের গল্প | সববয়সী
একরাশ অস্বস্তি নিয়ে ঘুম ভাঙল রুদ্রের। প্রথমে কিছুক্ষণ কিছুই ঠাহর করে উঠতে পারল না। তারপর চোখ গেল হাতঘড়ির দিকে। সকাল ছয়টা বেজে পনেরো মিনিট। ব্যাপার কি, এত সকালে তো তার ঘুম ভাঙে না! এতক্ষণে ঘরের কোনার গাছটি লক্ষ করল সে। গাছ! তার শোবার ঘরের ভেতর গাছ আসল কোত্থেকে?
সাথে সাথে তড়াক করে বিছানায় উঠে বসল রুদ্র।
ঘরের মধ্যে একটি খুদে মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। মেরেকেটে দেড় ফুট লম্বা হবে কি না সন্দেহ। পরনে কটকটে হলুদ রঙের জ্যাকেট আর নীল প্যান্ট।
- আহ্! ঘুম ভাঙল তাহলে।
রুদ্র কী বলবে ভেবে পেল না। তাকিয়ে আছে হাঁ করে।
- অবাক হচ্ছ? অবশ্য অবাক হবারই কথা। আমি একজন পাতালবাসী বামন ভুত। তুমি এর আগে কখনও ভুত দেখনি মনে হচ্ছে? কী উদ্ভট ব্যাপার!
রুদ্র এখনও বিছানায় বসে আছে। কথার উত্তর দেবে কি, ভয়ে তার ব্রহ্মতালু পর্যন্ত শুকিয়ে গেছে।
- আরে ভেবো না, আগেও আমি এ ধরনের ঘটনা ঘটতে দেখেছি। আমার নাম আভান্তিকা রাপ্টাপুলাস। এসো পরিচিত হই।
বামন ভুতটি এখন তার বিছানার দিকে এগিয়ে আসছে!
রুদ্র খিঁচে বাথরুমের দিকে দৌড় দিল। হৃদপিণ্ড ধুকপুক করছে, তবু এর মধ্যেই তাকিয়ে দেখল পেছন দিকে। না, ভুতটা তাকে তাড়া করছে না। বাথরুমে ঢুকে দড়াম করে দরজা লাগিয়ে দিল ভেতর থেকে।
রাপ্টাপুলাস একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। খুবই অন্যমনস্ক দেখাচ্ছে তাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই অবশ্য মনোযোগ দেয়ার মতো একটা জিনিস খুঁজে পেল সে। ঘরের চতুর্দিকের দেয়ালে দুর্দান্ত সব তৈলচিত্র ঝোলানো। খুটিয়ে খুটিয়ে ছবিগুলো দেখতে শুরু করল সে, যেন কতই না জরুরি কাজ এটা!
***
শেষ বিকেলে রুদ্র আবার পা টিপে টিপে শোবার ঘরে ঢুকল।
“যাক, ফিরে এলে তাহলে!” ভুতটার কণ্ঠ খুশি খুশি শোনাল, “আমি ভেবেছিলাম আর তোমার দেখা পাব না।”
“এসব আমার কল্পনা। তুই মোটেও সত্যি না।” রুদ্র ভয়ে ভয়ে বলল।
রাপ্টাপুলাসকে বেশ হতাশ দেখাল। “শুনে খুশি হতে পারলাম না। তোমার ব্যাপারে আমাকে এমন কিছু কি বলতে শুনেছ?”
“ভাগ!” রুদ্র এবার চিৎকার করল।
রাপ্টাপুলাস তার লম্বা নাকখানি চুলকাল। “এই যে, বর্দ্দা। আমরা এ ব্যাপারে কথা বলতে পারি না?”
জবাবে রুদ্র তার পায়ের জুতো খুলে ছুড়ে মারল রাপ্টাপুলাসের দিকে।
বামন ভুতটি কুঁই কুঁই করে উঠল কুকুরছানার মতো। তবে রুদ্র বুঝতে পারল আসলে এটা তার আতঙ্কিত চিৎকার। কারণ ভুতটি ঝাঁপ দিয়ে গাছের আড়ালে চলে গেছে।
***
রাতটা বাথটাবেই ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিল রুদ্র। বাথরুমের দরজা লক করা আছে ভেতর থেকে। বামন ভুতটা ভেতরে আসতে পারবে না।
ভন্ ভন্ ভনন্। একটা নীল রঙের বড় ডুমো মাছি অনেকক্ষণ ধরে ঘুরছে। একটু পরপরই বসতে চাইছে রুদ্রের নাকের ওপর। এক থাবড়া দিয়ে মাছিটাকে মেরে ফেলল সে। ধুত্তরি! ঘুমটাই চটকে গেল।
বাথটাব থেকে উঠতে যাবে, চারদিকের দৃশ্য দেখে চমকে গেল রুদ্র। বাথরুমটা ঘন ঝোপঝাড়ে ভর্তি হয়ে গেছে। অটুট নিস্তব্ধতা চারদিকে। রুদ্র তার পায়ের দিকে তাকাল। সাদা বাথটাবটা ধীরে ধীরে গাঢ় রং ধারণ করছে! দেখতে দেখতে ওটা ভেঙে গুড়ো গুড়ো হয়ে গেল। রুদ্র নড়ার চেষ্টা করল, কিন্তু কী এক অদ্ভুত জড়তায় যেন পেয়ে বসেছে তাকে। কয়েক মিনিটের ব্যর্থ লড়াই শেষে রুদ্র আর বলতে পারবে না কী হলো তার...
***
“তো,” ডাক্তার মশাই তার লম্বা নাকখানি চুলকালেন। “তোমার সর্বশেষ মতিভ্রম সহিংসতায় রূপ নিয়েছিল?”
রাপ্টাপুলাস মাথা নেড়ে সায় দিল। সে বিছানায় মাথা এলিয়ে পড়ে আছে। পরনে কটকটে হলুদ রঙের জ্যাকেট আর নীল প্যান্ট।
সাইকিয়াট্রিস্ট চিন্তিত ভঙ্গিতে মাথা নাড়লেন। “কিন্তু তুমি ঔষধ খাওয়ার পরেই আবার সব গায়েব হয়ে গেল?”
- হ্যাঁ, কিন্তু মনে হচ্ছিল যেন নিজ হাতে খুন করলাম।
- ও, এজন্যই তুমি ঔষধ খাওয়া বন্ধ রেখেছ?
“হ্যাঁ,” রাপ্টাপুলাসের কণ্ঠে স্পষ্ট অস্বস্তি। “আমার কেন যেন মনে হয় এটা ঠিক না। সবকিছু এত বাস্তব মনে হয়! ঔষধ খেলেই আবার সব কোথায় গায়েব হয়ে যায়! কোথায় যায় তারা?”
ডাক্তার দীর্ঘশ্বাস ফেললেন, “দেখো আভান্তিকা, মতিভ্রমে আসক্ত হওয়ায় লজ্জার কিছু নেই। কিন্তু এই কল্পনার রাজ্যে ভেসে ভেসে আনন্দ খোঁজা কতটুকু যুক্তিযুক্ত তা ভেবে দেখবে আশা করি।”
ভুতের ডাক্তার হাসলেন, “আমি বলতে চাইছি, আমরা সকলেই জানি যে মানুষ বলতে কোনো প্রাণীর অস্তিত্ব নেই। এটা সম্পূর্ণই কাল্পনিক।”
(Matt Tighe রচিত Figment গল্প অবলম্বনে)
আমি ডাক্তার নই
লিখেছেন কুটুমবাড়ি (তারিখ: রবি, ২০১০-০৬-১৩ ২৩:৩৫)@ সচলায়তন
ক্যাটেগরী: অণুগল্প | সায়েন্স ফিকশন | সববয়সী
রোবটরা আমাকে ভালোবাসে।
অবশ্য রোবটদের পক্ষে যতটা সম্ভব ততটা। এবং জৈবনিক বিচারে, অবশ্যই। আমার চেহারায় নাদুশনুদুশ শিশুসুলভ একটা ব্যাপার আছে। হয়তো এটা ওদের কপোট্রনিক মস্তিষ্কের বাবাসুলভ প্রবৃত্তিকে জাগিয়ে তোলে। যার দরুন তারা আমার প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য হয়। আর এ ব্যাপারটা আমার দায়িত্ব পালনে খুবই সাহায্য করে।
বসার ঘরের মাঝখানে অনড় পড়ে থাকা রোবটটার সামনে আমি হাঁটু গেড়ে বসলাম। রোবটটা নীল রঙের, আকারে ঢাউসই বলতে হয়। বেশ কয়েক বছরের পুরোনো মডেল এটা। এখন প্রায় মানুষের মতোই দেখতে যেসব অত্যাধুনিক রোবট বাংলাদেশের বাজার ছেয়ে ফেলেছে, ও-রকম নয় মোটেই।
আমার পেছনে পুরো পরিবার এসে জড়ো হয়েছে। দুঃখিত, চিন্তিত।
“আপনি কি তাকে সুস্থ করতে পারবেন?” মিসেস রহমান জিজ্ঞেস করলেন। তাঁর কোমল মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ। কাছেই দাঁড়িয়ে থাকা ছোট্ট মেয়েটিকে কাছে টেনে নিলেন তিনি। মি. রহমান আশ্বস্ত করার ভঙ্গিতে হাত রাখলেন স্ত্রীর কাঁধে। যদিও মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে তিনিও কম মুষড়ে পড়েননি।
“আমি ডাক্তার নই,” কিছুটা অন্যমনষ্ক সুরে বললাম আমি, চোখ সেঁটে আছে স্ক্যানারের দিকে।
“মাফ করবেন?” মি. রহমান তাড়াতাড়ি সামনে এগিয়ে এলেন, চমকে গেছেন কিছুটা।
“হুমম?” জিজ্ঞেস করলাম আমি, ঘোর কাটিয়ে উঠছি।
“ওহ্! আমি ডাক্তার নই। রোবটদের আসলে মস্তিষ্ক নেই, তাই তাদের সাইকিয়াট্রিস্ট বা এ জাতীয় কিছুর প্রয়োজন হয় না...” কাজের দিকে আবার মনোযোগ ফিরিয়ে নেয়ার আগে বললাম আমি। “আমি একজন টেকনিশিয়ান।”
“জুডার হঠাৎ করেই এখানে বসে পড়েছে, আর নড়ছে-চড়ছে না,” কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে ছোট্ট মেয়েটি বলল।
“কয়েক দিন আগেই তাকে আমরা সার্ভিসিং করিয়ে এনেছি। সবকিছু ঠিকই ছিল তখন,” মিসেস রহমান যোগ করলেন। “বুঝতে পারছি না ওর কী হয়েছে।”
আমি মাথা নেড়ে “হুমম” শব্দ করলাম, আসলে মনোযোগ নেই ওদের কথায়। “ইউনিট LP-3830, আমার কথার উত্তর দাও।”
“জুডার,” রোবটটার কণ্ঠ আশ্চর্য রকম মানুষের মতো, আমার কথা সংশোধন করে দিল। ওটা এখনও নড়েনি, তার ঝাপসা ফটোরিসিপ্টরে আলোর কোনো চিহ্নই নেই।
“আচ্ছা ঠিক আছে,” মেনে নেয়ার ভঙ্গিতে বললাম আমি। “তা জুডার, তোমার সবকিছু ঠিক-ঠাক মতন কাজ করছে তো?”
ওটা নরম শ্বাস ছাড়ল, “যদি তোমরা একে তা-ই বলো।”
আমি ওর সামনে কার্পেটের ওপর পা ভাঁজ করে বসলাম। “হেই, কী হয়েছে বলবে আমাকে?” আমি তার কাঁধে হাত রাখলাম। জুডারের চোখে একটা ক্ষীণ আলোর রেখা ঝিলিক দিয়েই মিলিয়ে গেল।
“রেডফোর্ডরা নতুন রোবট কিনেছে,” অবশেষে ওটা কথা বলল।
“হ্যাঁ,” মি. রহমান আমার পেছন থেকে সাড়া দিলেন। “আমাদের দুটো বাড়ি পরেই ওদের বাসা। নতুন N-70 সিরিজের একটা রোবট কিনেছে ওরা।”
“বলে যাও,” আমি ওটাকে উৎসাহ দিলাম।
“ওটা বাচ্চাদের স্কুলে আনা-নেয়া করে, বাড়ির টুকটাক সারাইয়ের কাজ করে, এবং তার আছে সম্প্রসারণযোগ্য বাহু এবং বাগানের ঝোপ পরিষ্কার করার একটি বাড়তি উপকরণ, এবং...”
“এবং সে তুলনায় তোমার নিজেকে খুবই সাদামাটা আর সেকেলে মনে হচ্ছে?” নরম সুরে বললাম আমি।
“এই N-70 সিরিজের রোবটগুলি এত অসাধারণ,” ওটা বলল। “ওই ধরনের একটা রোবট এ পরিবারের অনেক বেশি কাজে আসবে। আমার চেয়ে অনেক ভালো কাজ করতে পারবে ওটা।”
“জুডার, তোমাকে এখন মানব প্রজাতির একটা গোপন রহস্য বলব। এটা কিছুটা স্ববিরোধী মনে হতে পারে, প্রতিজ্ঞা করো আমার কথা শুনে তোমার মাথা বিস্ফোরিত হবে না।”
ওটা মাথা নাড়ল, চোখ আগের চেয়ে অনেক উজ্জ্বল দেখাচ্ছে।
“জুডার,” আমি বললাম। “মানুষ আবেগীয় সম্পর্ক তৈরি করে। তারা সব সময়ই নতুন এবং চকচকে জিনিসের পেছনে ছোটে না। তারা তা-ই চায় যা তারা ভালোবাসে।”
“তাঁরা আমাকে ভালোবাসেন?” ওটা জিজ্ঞেস করল, তাকিয়ে আছে আমার কাঁধের ওপর দিয়ে। ওখানে, ওর জন্য অপেক্ষা করছিল অভাবিত মনুষ্যত্ব। ওটা উঠে দাঁড়াল, এবং এক মুহূর্ত পর, আমিও।
“ডাক্তার,” জুডারের কণ্ঠ খুশি খুশি শোনাল। “এটা একেবারেই অযৌক্তিক।”
“জুডার,” আমি হাসলাম, “আমি ডাক্তার নই।”
দায়স্বীকার : ব্রায়ান সি. বায়েরের লেখা দ্য রোবট হুইসপার গল্প অবলম্বনে রচিত
ক্যাটেগরী: অণুগল্প | সায়েন্স ফিকশন | সববয়সী
রোবটরা আমাকে ভালোবাসে।
অবশ্য রোবটদের পক্ষে যতটা সম্ভব ততটা। এবং জৈবনিক বিচারে, অবশ্যই। আমার চেহারায় নাদুশনুদুশ শিশুসুলভ একটা ব্যাপার আছে। হয়তো এটা ওদের কপোট্রনিক মস্তিষ্কের বাবাসুলভ প্রবৃত্তিকে জাগিয়ে তোলে। যার দরুন তারা আমার প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য হয়। আর এ ব্যাপারটা আমার দায়িত্ব পালনে খুবই সাহায্য করে।
বসার ঘরের মাঝখানে অনড় পড়ে থাকা রোবটটার সামনে আমি হাঁটু গেড়ে বসলাম। রোবটটা নীল রঙের, আকারে ঢাউসই বলতে হয়। বেশ কয়েক বছরের পুরোনো মডেল এটা। এখন প্রায় মানুষের মতোই দেখতে যেসব অত্যাধুনিক রোবট বাংলাদেশের বাজার ছেয়ে ফেলেছে, ও-রকম নয় মোটেই।
আমার পেছনে পুরো পরিবার এসে জড়ো হয়েছে। দুঃখিত, চিন্তিত।
“আপনি কি তাকে সুস্থ করতে পারবেন?” মিসেস রহমান জিজ্ঞেস করলেন। তাঁর কোমল মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ। কাছেই দাঁড়িয়ে থাকা ছোট্ট মেয়েটিকে কাছে টেনে নিলেন তিনি। মি. রহমান আশ্বস্ত করার ভঙ্গিতে হাত রাখলেন স্ত্রীর কাঁধে। যদিও মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে তিনিও কম মুষড়ে পড়েননি।
“আমি ডাক্তার নই,” কিছুটা অন্যমনষ্ক সুরে বললাম আমি, চোখ সেঁটে আছে স্ক্যানারের দিকে।
“মাফ করবেন?” মি. রহমান তাড়াতাড়ি সামনে এগিয়ে এলেন, চমকে গেছেন কিছুটা।
“হুমম?” জিজ্ঞেস করলাম আমি, ঘোর কাটিয়ে উঠছি।
“ওহ্! আমি ডাক্তার নই। রোবটদের আসলে মস্তিষ্ক নেই, তাই তাদের সাইকিয়াট্রিস্ট বা এ জাতীয় কিছুর প্রয়োজন হয় না...” কাজের দিকে আবার মনোযোগ ফিরিয়ে নেয়ার আগে বললাম আমি। “আমি একজন টেকনিশিয়ান।”
“জুডার হঠাৎ করেই এখানে বসে পড়েছে, আর নড়ছে-চড়ছে না,” কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে ছোট্ট মেয়েটি বলল।
“কয়েক দিন আগেই তাকে আমরা সার্ভিসিং করিয়ে এনেছি। সবকিছু ঠিকই ছিল তখন,” মিসেস রহমান যোগ করলেন। “বুঝতে পারছি না ওর কী হয়েছে।”
আমি মাথা নেড়ে “হুমম” শব্দ করলাম, আসলে মনোযোগ নেই ওদের কথায়। “ইউনিট LP-3830, আমার কথার উত্তর দাও।”
“জুডার,” রোবটটার কণ্ঠ আশ্চর্য রকম মানুষের মতো, আমার কথা সংশোধন করে দিল। ওটা এখনও নড়েনি, তার ঝাপসা ফটোরিসিপ্টরে আলোর কোনো চিহ্নই নেই।
“আচ্ছা ঠিক আছে,” মেনে নেয়ার ভঙ্গিতে বললাম আমি। “তা জুডার, তোমার সবকিছু ঠিক-ঠাক মতন কাজ করছে তো?”
ওটা নরম শ্বাস ছাড়ল, “যদি তোমরা একে তা-ই বলো।”
আমি ওর সামনে কার্পেটের ওপর পা ভাঁজ করে বসলাম। “হেই, কী হয়েছে বলবে আমাকে?” আমি তার কাঁধে হাত রাখলাম। জুডারের চোখে একটা ক্ষীণ আলোর রেখা ঝিলিক দিয়েই মিলিয়ে গেল।
“রেডফোর্ডরা নতুন রোবট কিনেছে,” অবশেষে ওটা কথা বলল।
“হ্যাঁ,” মি. রহমান আমার পেছন থেকে সাড়া দিলেন। “আমাদের দুটো বাড়ি পরেই ওদের বাসা। নতুন N-70 সিরিজের একটা রোবট কিনেছে ওরা।”
“বলে যাও,” আমি ওটাকে উৎসাহ দিলাম।
“ওটা বাচ্চাদের স্কুলে আনা-নেয়া করে, বাড়ির টুকটাক সারাইয়ের কাজ করে, এবং তার আছে সম্প্রসারণযোগ্য বাহু এবং বাগানের ঝোপ পরিষ্কার করার একটি বাড়তি উপকরণ, এবং...”
“এবং সে তুলনায় তোমার নিজেকে খুবই সাদামাটা আর সেকেলে মনে হচ্ছে?” নরম সুরে বললাম আমি।
“এই N-70 সিরিজের রোবটগুলি এত অসাধারণ,” ওটা বলল। “ওই ধরনের একটা রোবট এ পরিবারের অনেক বেশি কাজে আসবে। আমার চেয়ে অনেক ভালো কাজ করতে পারবে ওটা।”
“জুডার, তোমাকে এখন মানব প্রজাতির একটা গোপন রহস্য বলব। এটা কিছুটা স্ববিরোধী মনে হতে পারে, প্রতিজ্ঞা করো আমার কথা শুনে তোমার মাথা বিস্ফোরিত হবে না।”
ওটা মাথা নাড়ল, চোখ আগের চেয়ে অনেক উজ্জ্বল দেখাচ্ছে।
“জুডার,” আমি বললাম। “মানুষ আবেগীয় সম্পর্ক তৈরি করে। তারা সব সময়ই নতুন এবং চকচকে জিনিসের পেছনে ছোটে না। তারা তা-ই চায় যা তারা ভালোবাসে।”
“তাঁরা আমাকে ভালোবাসেন?” ওটা জিজ্ঞেস করল, তাকিয়ে আছে আমার কাঁধের ওপর দিয়ে। ওখানে, ওর জন্য অপেক্ষা করছিল অভাবিত মনুষ্যত্ব। ওটা উঠে দাঁড়াল, এবং এক মুহূর্ত পর, আমিও।
“ডাক্তার,” জুডারের কণ্ঠ খুশি খুশি শোনাল। “এটা একেবারেই অযৌক্তিক।”
“জুডার,” আমি হাসলাম, “আমি ডাক্তার নই।”
দায়স্বীকার : ব্রায়ান সি. বায়েরের লেখা দ্য রোবট হুইসপার গল্প অবলম্বনে রচিত
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)