শুক্রবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১০

দ্য পিকচার অব ডোরিয়ান গ্রে | চতুর্থ কিস্তি |

[i]একটা আর্তনাদ শুরু হয়েই মিলিয়ে গেল। রক্তের দমকে শ্বাস বন্ধ হয়ে আসার বিশ্রী ঘড়ঘড়ে শব্দ শোনা যাচ্ছে শুধু। বাসিলের হাত দুটো শূন্যে উঠে গেল, যেন বাতাসে কিছু ধরার চেষ্টা করছেন। ডোরিয়ান আরও দু বার আঘাত করল তাঁকে। মেঝের ওপর এখন ফোঁটায় ফোঁটায় রক্ত পড়া শুরু হয়েছে। তাঁর শরীরটা আর নড়ছে না। ডোরিয়ান চাকুটা ছুড়ে মারল টেবিলের ওপর। কান পাতল। শুধুই নীরবতা।[/i]
[i]
শুধু, সুতো ওঠা কার্পেটের গায়ে ফোঁটায় ফোঁটায় রক্ত পড়ার শব্দ! অন্যকিছু কানে আসছে না। [/i]

[size=24][url=http://www.sachalayatan.com/guest_writer/33509][প্রথম কিস্তি][/url][/size] [size=24][url=http://www.sachalayatan.com/guest_writer/34761][দ্বিতীয় কিস্তি][/url][/size] [size=24][url=http://www.sachalayatan.com/guest_writer/34912][তৃতীয় কিস্তি][/url][/size]

[size=24]চতুর্থ কিস্তি[/size]

[size=20]পর্ব পনেরো ॥ খুন[/size]

বাসিল গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে আছেন, নিজেকে ছেড়ে দিয়েছেন টেবিলের পাশে পড়ে থাকা নড়বড়ে চেয়ারটাতে। ডোরিয়ান জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আছে, মাঝে মাঝে তার ফোঁপানির শব্দ ভেসে আসছে।

‘কী একটা শিক্ষা, ডোরিয়ান! কী ভয়ংকর একটা শিক্ষা! প্রার্থনা, ডোরিয়ান, প্রার্থনা করো!’ উপদেশ দিলেন বাসিল। ‘শৈশবে আমাদের কী শেখানো হয়?—অন্যায়ের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা! এসো আমরা একসাথে প্রার্থনা করি। তোমার দেমাগি প্রার্থনা মঞ্জুর হয়েছে। তোমার অনুতপ্ত প্রার্থনাও মঞ্জুর হবে। আমি তোমার রূপের গভীর প্রশংসা করেছি—উভয়ে শাস্তিও পেয়েছি এর জন্যে।’

‘অনেক দেরি হয়ে গেছে, বাসিল,’ ডোরিয়ান ভেঙে ভেঙে বলল।

‘কখনোই না, ডোরিয়ান। এসো নতজানু হই। একজীবনে যথেষ্ট পাপ করে ফেলেছ। দেখছ না ওই অভিশপ্ত ছবিটা কেমন ক্রুর চোখে তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে?’

ডোরিয়ান গ্রে একঝলক ছবিটার দিকে তাকাল। হঠাৎ করেই তার দুরন্ত ঘৃণা লাগছে লোকটাকে। অন্ধ ক্রোধ তাকে যেন কোনঠাসা পশুর মতো উত্তেজিত করে তুলছে। এত বেশি ঘৃণা সে জীবনে কিছুকে করেনি।

সে বন্য চোখে চারদিকে তাকাল। একটা চাকু তার দৃষ্টি কেড়ে নিল, নিরীহ ভঙ্গিতে সিন্দুকের ওপর পড়ে আছে ওটা। ধীরে ধীরে এগিয়ে গেল সেদিকে, বাসিলকে অতিক্রম করছে।

বাসিলের পেছনে যাওয়া মাত্র ডোরিয়ান চাকুটা হাতে তুলে নিল। একটুও দেরি না করে নিঃশব্দে এগিয়ে গেল বাসিলের দিকে। সজোরে চাকুটা বসিয়ে দিল তাঁর কানের পেছনে। একহাতে লোকটার মাথা ঠেসে ধরে রেখেছে টেবিলের ওপর, চাকুটা বারবার নামছে, উঠছে।

একটা আর্তনাদ শুরু হয়েই মিলিয়ে গেল। রক্তের দমকে শ্বাস বন্ধ হয়ে আসার বিশ্রী ঘড়ঘড়ে শব্দ শোনা যাচ্ছে শুধু। বাসিলের হাত দুটো শূন্যে উঠে গেল, যেন বাতাসে কিছু ধরার চেষ্টা করছেন। ডোরিয়ান আরও দু বার আঘাত করল তাঁকে। মেঝের ওপর এখন ফোঁটায় ফোঁটায় রক্ত পড়া শুরু হয়েছে। শরীরটা আর নড়ছে না। ডোরিয়ান চাকুটা ছুড়ে মারল টেবিলের ওপর। কান পাতল। শুধুই নীরবতা।

শুধু, সুতো ওঠা কার্পেটের গায়ে ফোঁটায় ফোঁটায় রক্ত পড়ার শব্দ! অন্যকিছু কানে আসছে না। ডোরিয়ান দরজা খুলে করিডোরে বেরিয়ে এল। রেলিং-এর ওপর দিয়ে ঘুটঘুটে অন্ধকার সিঁড়িঘরে উঁকি দিল। পুরো বাড়ি নিস্তব্ধ হয়ে আছে। ঘরে ফিরে আবার দরজায় তালা লাগিয়ে দিল সে।

কত দ্রুত সে এটা করেছে! ডোরিয়ান গ্রে তবু আশ্চর্যজনকভাবে শান্ত হয়ে আছে, দাঁড়াল গিয়ে খোলা ব্যালকনিতে। বাতাসের ঝাপটায় কুয়াশা সরে সরে যাচ্ছে। ময়ুরপুচ্ছের মতো আকাশ তার দিকে তিরস্কার-মাখা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

সে নিচে তাকাল। একজন নিঃসঙ্গ পুলিশ টহল দিচ্ছে, তার হাতের লণ্ঠন থেকে লম্বা আলো গিয়ে পড়ছে বাড়িঘরের নীরব আঙিনায়। একজন পথচারী একাকী টলমল পায়ে শব্দ করতে করতে যাচ্ছে।

একটা দমকা হাওয়া বয়ে গেল জায়গাটার ওপর দিয়ে। গ্যাসবাতিগুলো নিভু নিভু হয়ে নীল বর্ণ ধারণ করল, পাতাশূন্য গাছগুলোর শাখা-প্রশাখা দুলছে সামনে-পেছনে। ডোরিয়ান তাড়াতাড়ি ঘরের ভেতরে এসে দরজা বন্ধ করে দিল। ঠাণ্ডায় তার শরীর কাঁটা দিয়ে উঠছে। এই মৃত্যু ও ধ্বংসের ঘর থেকে মুক্তির আকাঙ্ক্ষা যেন তার ভেতর মাথা কুটে মরছে।

নষ্ট করার মতো একটুও সময় নেই হাতে। এক্ষুনি এ ঘর থেকে তাকে বেরোতে হবে। নিহত লোকটার দিকে সে তাকাল না পর্যন্ত। বিড়ম্বিত ছবিটা যাঁর আঁকা, সেই বন্ধুটা তার জীবন থেকে সরে গেছে এটাই যথেষ্ট।

ডোরিয়ান দরজায় তালা দিয়ে নিঃশব্দে নেমে গেল সিঁড়ি বেয়ে। বাসিলের কোট এবং ব্যাগ তার চোখে পড়ল। তাড়াতাড়ি সে লুকিয়ে ফেলল সেগুলো, মাথায় চিন্তার ঝড় বয়ে যাচ্ছে। কী প্রমাণ আছে তার বিরুদ্ধে? বাসিল বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছেন রাত এগারোটায়। তাঁকে কেউ ফিরে আসতে দেখেনি। বেশির ভাগ ভৃত্য শহরের বাইরে, কান্ট্রি হাউসে। মধ্যরাতের ট্রেনে প্যারিস যাওয়ার কথা ছিল বাসিলের। কয়েক মাসের মধ্যে তাঁর অনুপস্থিতি কেউ টের পাবে না। অনেক সময়! তত দিনে সব প্রমাণ মুছে ফেলা যাবে।

হঠাৎই তার মাথায় এল চিন্তাটা। একটা অ্যালিবাই থাকা দরকার। শরীরে হ্যাট এবং কোট চাপিয়ে সে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল। কিছুক্ষণ পরই আবার ফিরে এসে প্রধান ফটকের বেল বাজাল। খানসামা একটু দেরি করেই দরজা খুলল, সে বেচারার চোখ ঘুমে ঢুলুঢুলু হয়ে আছে।

‘তোমার ঘুম ভাঙানোর জন্যে দুঃখিত, ফ্রান্সিস,’ ডোরিয়ান বলল। ‘কিন্তু আমি চাবি ফেলে গেছি। আমার খোঁজে কেউ এসেছিল?’

‘মি. হলওয়ার্ড, স্যার। কিন্তু তিনি রাত এগারোটায় চলে গেছেন ট্রেন ধরার জন্যে।’

‘ওহ্! আমি দুঃখিত যে তার সাথে দেখা হলো না। তিনি কি কোনো বার্তা দিয়ে গেছেন?’ ডোরিয়ান ধূর্ততার সাথে জিজ্ঞেস করল।

‘না স্যার, তবে বলে গেছেন প্যারিস থেকে চিঠি লিখবেন।’

‘ঠিক আছে, ফ্রান্সিস। কাল সকাল ন-টায় আমাকে ঘুম থেকে তুলে দিয়ো। শুভরাত্রি।’

[size=20]পর্ব ষোল ॥ অন্যায়ের চিহ্ন অদৃশ্য[/size]

পরদিন সকাল ন-টা।

এক কাপ গরম চকোলেট নিয়ে ভিক্টর ঘরে প্রবেশ করল এবং জানালার খড়খড়ি তুলে দিল।

ডোরিয়ান পরম শান্তিতে ঘুমিয়ে আছে। তাকে দেখাচ্ছে একটা ছোট্ট শিশুর মতো, যেন খেলাধূলায় ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে! ডোরিয়ানকে ঘুম থেকে তোলার জন্য তার খানসামাকে দু বার কাঁধ ধরে ঝাকাতে হলো।

ডোরিয়ান পাশ ফিরে শুল, কনুইয়ে ভর দিয়ে আস্তে আস্তে চুমুক দিচ্ছে তরল চকোলেটে। নভেম্বরের পাকা রোদ যেন স্রোতের মতো ঘরের ভেতর ঢুকছে। আকাশ একদম পরিষ্কার, বাতাসে উষ্ণতার ছাপ। পুরোপুরি মে-র সকালের মতো আবহাওয়া।

কিন্তু ধীরে ধীরে, রক্তাক্ত পায়ে, গত রাতের ঘটনাপ্রবাহ আবার তার মাথায় আসতে শুরু করেছে। সে একজন মানুষকে খুন করেছে। এবং লাশটা এখনও তার বাড়ির ভেতরেই আছে!

পানীয় শেষ করে সে টেবিলে বসে গেল চিঠি লেখার জন্য। দুটো চিঠি লিখল সে। একটা পকেটে ঢুকিয়ে রেখে অন্যটা তার খানসামার হাতে দিয়ে মি. অ্যালান ক্যাম্পবেল, ১৫২ হার্টফোর্ড স্ট্রীট—এই ঠিকানায় দিয়ে আসার জন্য নির্দেশ দিল। ডোরিয়ান চায় অ্যালান ক্যাম্পবেল যেন অবিলম্বে তার বাড়িতে আসে।

আঁকাজোকা করে আর বই পড়ে ডোরিয়ান সকালটা কাটিয়ে দিল। কিন্তু দুশ্চিন্তা তার পিছু ছাড়ছে না। কী হবে যদি অ্যালান ক্যাম্পবেল দেশের বাইরে থাকে? আরও খারাপ কথা, যদি সে দেখা করতে অস্বীকার করে? মোটের ওপর, তারা তো আর এখন বন্ধু নয়। একসময় তারা ঘনিষ্ঠ ছিল, সেটা বছর পাঁচেক আগের কথা। তারপর বন্ধুত্ব শেষ হয়ে গেছে। হঠাৎ করে, সম্পূর্ণভাবে।

কখনো যদি দেখা হয়ে যায়, শুধু ডোরিয়ান কথা বলে, বা বলা ভালো, বলার চেষ্টা করে। এবং বলাই বাহুল্য, কথা এগোয় না।

অ্যালান ক্যাম্পবেল দারুণ বুদ্ধিমান ও টগবগে এক তরুণ, যে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছে বিজ্ঞানের জন্য। যখন সে ক্যামব্রিজে পড়ত, দিনের বেশির ভাগ সময় গবেষণাগারে পড়ে থাকত। সে একজন অসাধারণ সংগীতজ্ঞও বটে এবং সংগীতই তাদের দু জনকে প্রথমে কাছাকাছি নিয়ে এসেছিল।

এখনো কেউ জানে না তাদের ঝগড়া কী নিয়ে। কিন্তু আর সবাই তাদের বিরল কথোপকথন লক্ষ করেছে। এমনকি কোনো পার্টিতে ডোরিয়ান গ্রে উপস্থিত হলে ক্যাম্পবেল সেখান থেকে চলে যায়। সে বদলেও গেছে অনেক—প্রায় সময়ই তাকে বিষণ্ন দেখায়। এখন সংগীত তার কাছে অরূচিকর, নিজেকে পুরোপুরি সঁপে দিয়েছে বিজ্ঞানের সাধনায়।

ডোরিয়ান হলময় পায়চারি শুরু করল। উত্তেজনা অসহনীয় হয়ে উঠেছে। সময় যেন থমকে গেছে। অবশেষে দরজাটা খুলে গেল। ‘মি. ক্যাম্পবেল, স্যার,’ খানসামা বলল। ডোরিয়ান বড় করে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ল।

‘তাকে এই মুহূর্তে ভেতরে নিয়ে এসো, ফ্রান্সিস,’ ডোরিয়ান যেন নিজেকে ফিরে পেয়েছে। এখন সে খুব তাড়াতাড়িই অপরাধের সব প্রমাণ মুছে ফেলতে পারবে।

অ্যালানের চেহারা কঠোর হয়ে আছে, একটু যেন ফ্যাকাশেও। দুই সাবেক বন্ধু মুখোমুখি চেয়ারে বসল। দুজোড়া চোখের মিলন ঘটল। ডোরিয়ান জানে সে একটা ভয়ংকর কাজে হাত দিতে যাচ্ছে!

‘আসার জন্যে ধন্যবাদ, অ্যালান।’

‘তুমি লিখে পাঠিয়েছ এটা জীবন-মৃত্যুর বিষয়,’ অ্যালান বলল। ‘আমি অবশ্য গ্রাহ্য করি না। আর এটা জানাতেই আমি এসেছি। তোমার সঙ্গে কোনো কাজ করার ইচ্ছে আমার নেই। আমি তোমার কলঙ্কিত জীবনের সাথে জড়াতে চাই না।’

ডোরিয়ান শান্তভাবে অ্যালানের জ্বালাময়ী বক্তব্যটি শুনল। সে একটু চিন্তা করল। তারপর সামনে ঝুঁকে বসল, কথা বলছে কোমল স্বরে, ‘অ্যালান, আমি একজনকে খুন করেছি। তুমি ভাবতেও পারবে না সে আমার কতটা ক্ষতি করেছে। অ্যালান, লাশটি ধ্বংস করতে আমাকে সাহায্য করো। তুমি একজন ডাক্তার,’ সে যোগ করল, ‘তুমি জানো কীভাবে আমি রেহাই পেতে পারি। একমাত্র তুমিই আমাকে রক্ষা করতে পার। তোমাকে জড়াতে আমি বাধ্য হয়েছি। আমার অন্য কোনো উপায় ছিল না।’

‘তোমাকে সাহায্য করার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে আমার নেই, ডোরিয়ান,’ অ্যালান রায় দেয়ার ভঙ্গিতে বলল।

‘অ্যালান, তুমি একজন বিজ্ঞানমনস্ক ব্যক্তি। তুমি রসায়ন এবং এ ধরনের বস্তু সম্পর্কে ভালো জ্ঞান রাখ। এ বিষয়ে অনেক পরীক্ষাও চালিয়েছ। তুমি শুধু ওপরতলায় যে লাশটি পড়ে আছে তা ধ্বংস করে দেবে—ধ্বংস করবে এমনভাবে, যেন এর কোনো চিহ্নই না থাকে,’ ডোরিয়ান নির্দেশনা দিল।

‘কেউ লোকটাকে এ বাড়িতে আসতে দেখেনি। সত্যি, এ মুহূর্তে তাঁর প্যারিসে থাকার কথা। কয়েক মাসের মধ্যে তাঁর খোঁজ পড়বে না। যখন সবাই টের পাবে, তত দিনে তাঁর কোনো চিহ্ন এখানে থাকবে না। অ্যালান, তুমি অবশ্যই তাঁকে, তাঁর সবকিছুসহ, এক মুঠো ছাইয়ে পরিণত করবে—যা আমি বাতাসে ছড়িয়ে দিতে পারব।’

‘তুমি বদ্ধ উন্মাদ, ডোরিয়ান,’ অ্যালান ক্যাম্পবেলের কণ্ঠ বরফের মতো শীতল শোনাল। ‘উন্মাদ না হলে কীভাবে চিন্তা করলে এই ভয়ংকর স্বীকারোক্তির পরেও তোমাকে সাহায্য করব। এ বিষয়ে আমার কিছুই করার নেই। তোমার কী হবে তা আমি পরোয়া করি না। এটাই তোমার পাওনা!’

‘তোমাকে কিছু করতেই হবে। অপেক্ষা করো এবং আমার কথা শোনো, অ্যালান,’ ডোরিয়ান জেদ ধরল।

‘খুন! হাঁ ঈশ্বর, ডোরিয়ান! এজন্যেই তুমি দুনিয়ায় এসেছ? আমি পুলিশকে জানাব না। এটা আমার বিষয় নয়। তা ছাড়া, তুমি এমনিতেই গ্রেপ্তার হবে। প্রতিটা অপরাধীই বোকার মতো কিছু না-কিছু করে বসে। কিন্তু আমার কিছুই করার নেই।’

প্রাক্তন বন্ধুর কথায় ডোরিয়ানের মধ্যে কোনো ভাবান্তর দেখা গেল না। সে যখন কথা বলা শুরু করল, তাকে নিজের মতে সম্পূর্ণ অটল দেখাল, ‘অ্যালান, আমি যা বলছি—তোমাকে শুধু একটি বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা চালাতে হবে। তুমি যখন হাসপাতালে বা মর্গে যাও, সেখানকার আতঙ্ক তো তোমাকে স্পর্শ করে না! যদি ভয়ংকর কোনো গবেষণাগারে সারা শরীরে ক্ষতচিহ্ন নিয়ে একটা লাশকে টেবিলে পড়ে থাকতেও দেখ, তুমি তো খুব সাধারণভাবে তাকাবে যেন ওটা খুব আকর্ষণীয় একটা বিষয়।

তোমার তো মনে হবে না তুমি কোনো অন্যায় কাজ করছ। যে কাজটি তোমার কাছ থেকে আশা করছি, প্রায় সে ধরনের কাজ তুমি আগেও করেছ। এবং মনে করিয়ে দেই, আমার বিরুদ্ধে এটাই একমাত্র প্রমাণ। এটা যদি উদ্ধার হয়, আমি ধ্বংস হয়ে যাব। আমাকে যদি সাহায্য না কর ঠিক তা-ই ঘটবে।’

‘অ্যালান, অনুগ্রহ করো,’ ডোরিয়ান গ্রের চোখে রাগ মেশানো করুণা প্রার্থনার দৃষ্টি। ‘আমার অবস্থানের কথা একবার চিন্তা করো। তুমি আসার আগে আমি আতঙ্কে অস্থির হয়ে উঠেছিলাম। দয়া করো, আমরা একসময় বন্ধু ছিলাম।’

‘ওইসব দিনের কথা আমার সামনে উচ্চারণ কোরো না। সেসব এখন মৃত,’ অ্যালান উত্তর দিল।

‘কিন্তু, অ্যালান, তুমি সাহায্য না করলে আমি ধ্বংস হয়ে যাব। কর্তৃপক্ষ আমাকে ফাঁসিতে ঝোলাবে!’ ডোরিয়ান চিৎকার করল।

‘তোমার দয়াভিক্ষা শোভা পায় না, ডোরিয়ান,’ অ্যালান আশ্চর্য রকম শান্ত হয়ে আছে। ‘আমি পুরো ব্যাপারটা প্রত্যাখ্যান করছি। এটা তোমার নির্বোধ আচরণ। তুমি নিজেই বিপদে ডেকে এনেছ। আমার কোনো সম্পর্ক নেই এর সাথে। সমস্যা তৈরি করেছ তুমি, সমাধানও তুমিই করবে।’

‘তুমি কি নিশ্চিত যে আমাকে সাহায্য করবে না?’ ডোরিয়ান শেষবারের মতো জানতে চাইল।

‘আমি নিশ্চিত,’ অ্যালান বলল।

ডোরিয়ান এক মুহূর্ত থম মেরে রইল। তারপর এক টুকরো কাগজ তুলে নিয়ে কিছু একটা লিখল সেটার ওপর। সাবধানে সেটা ভাঁজ করে তুলে দিল ক্যাম্পবেলের হাতে। লেখাটায় এমন কিছু ছিল যে পড়তে গিয়ে ক্যাম্পবেলের চেহারা ভূতের মতো সাদা হয়ে গেল। তার দারুণ অস্বস্তি লাগতে শুরু করেছে, হৃদপিণ্ডটা এমনভাবে ধুকপুক করছে যেন ছিঁড়ে বেরিয়ে যাবে।

কয়েক মিনিটের শ্বাসরুদ্ধকর নীরবতা, তারপর ডোরিয়ান কথা বলল। ‘আমি দুঃখিত, অ্যালান। কিন্তু তুমি আর কোনো বিকল্প রাখনি। তুমি যদি সাহায্য না কর, কাগজে নাম উল্লেখ করা লোকটার কাছে আমি চিঠিটা পাঠিয়ে দেব। এখন আমাকে প্রত্যাখ্যান করা তোমার জন্যে অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

ক্যাম্পবেল মাথা নেড়ে সায় দিল, পরাজয় মেনে নিয়েছে। সে গালে হাত দিয়ে বসে রইল দীর্ঘক্ষণ, একটা কাঁপুনি বয়ে গেল তার শরীর দিয়ে। সে জানে তার আর অন্য কোনো উপায় নেই—ডোরিয়ান গ্রে-কে প্রত্যাখ্যান করা মানে নিজের জীবন বিপন্ন করা!

‘হ্যাঁ, এখন আমার কথামতোই তোমাকে চলতে হবে, অ্যালান। তুমি জানো আমি কী বোঝাতে চাইছি। আমি যা চেয়েছি শুধু তা-ই করো।’ ডোরিয়ান তার একটা হাত রাখল অ্যালানের কাঁধে। এই সামান্য ভারেই যেন নুয়ে পড়ল সেটা। অ্যালান তার সহকারীকে খবর দিল এবং প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নিয়ে আসার জন্য বলল। যখন সবকিছু এসে পৌঁছাল, ডোরিয়ান তাকে সিঁড়ির ওপর নিজের খেলাঘরে পথ দেখিয়ে নিয়ে গেল।

ডোরিয়ান দরজা খুলল আর খুলেই সূর্যের প্রখর আলোয় ছবিটার মুখ দেখতে পেল। তার মনে পড়ল গত রাতে সে ভুলে গেছে, জীবনে এই প্রথমবারের মতো, বিড়ম্বিত ক্যানভাসটি ঢেকে রাখতে। এটা কী আতঙ্কজনক! ওই লাল বিন্দুটা কী, যা তার একটা হাতের ওপর জ্বলজ্বল করছে? ক্যানভাসটি কি রক্ত ঝরিয়েছে?

দ্বিতীয়বার না তাকিয়ে, ডোরিয়ান একপাশ থেকে কাপড়টা তুলে নিল এবং ভূতে-পাওয়া ছবিটা ঢেকে রাখল।

‘আমাকে একা থাকতে দাও,’ অ্যালান আদেশ করল। ‘এটা কয়েক ঘণ্টা সময় নেবে।’

ডিনারের সময় হওয়ার আগেই, অ্যালান সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে এল। ‘তোমার ইচ্ছা আমি পূরণ করেছি,’ সে তিক্ততার সাথে বলল। ‘আমি আর তোমার মুখ দেখতে চাই না।’

-----------------------------------
কুটুমবাড়ি
mhdrakib@gmail.com
-----------------------------------

ছবিসূত্র : ১. [url=http://www.google.com/imgres?imgurl=http://www.pinkkryptonite.com/images/pinkkryptonite/dorian.jpg&imgrefurl=http://www.pinkkryptonite.com/2008/01/the_picture_of_dorian_gray.html&usg=__B8sqOXWxPjF6RleAopGNX1-8vhc=&h=456&w=300&sz=41&hl=en&start=42&sig2=ut0wPZJaCSgWsgXmrLxkIA&zoom=1&tbnid=ViKUh4NT5uSmEM:&tbnh=125&tbnw=82&ei=-rCTTIG_D8yM4gajvpDyAw&prev=/images%3Fq%3Dthe%2Bpicture%2Bof%2Bdorian%2Bgray%26hl%3Den%26biw%3D1016%26bih%3D543%26gbv%3D2%26tbs%3Disch:10%2C798&itbs=1&iact=hc&vpx=687&vpy=183&dur=318&hovh=174&hovw=114&tx=94&ty=191&oei=eLCTTJLbI9CDswaogv2FCQ&esq=12&page=3&ndsp=21&ved=1t:429,r:12,s:42&biw=1016&bih=543]pinkkryptonite.com[/url]
২. [url=http://www.squidoo.com/Artist-Plutenko]squidoo.com[/url]

বুধবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০১০

বানানায়তন- ২ | ও কি এল, ও কি এল না |

যারা প্রথম পর্ব পড়েননি [url=http://www.sachalayatan.com/guest_writer/33356]এখানে[/url] ক্লিক করুন।

বাংলায় লিখতে চান, অথচ বানানকে ভয় পান না এমন লোক কমই আছে। বাজারে প্রচলিত স্পেল চেকারগুলো তেমন কার্যকরী নয়। আর যদি কখনও হয়ও, স্বাবলম্বী হওয়াটাই ভালো মনে করি। অন্তত যতটুকু সম্ভব। বিশেষত যখন বানানরীতি একটি চলমান বিষয়। এবং বাংলা বানানের বিশৃঙ্খলাটাও যখন আজকের নয়।

যতটুকু জানা যায়, আঠারো শতক পর্যন্ত বাংলা বানানে রীতিমতো নৈরাজ্য চলছিল। তখন ‘বাংলা বানান ছিলো স্বাধীন স্বেচ্ছাচারী–লেখক বা লিপিকরের উচ্চারণ অনুসারেই লিখিত হতো বানান।’ (হুমায়ুন আজাদ, বাংলা ভাষা, প্রথম খণ্ড)।

ঐতিহ্যগতভাবে পালির সাথে বেশি মিল থাকলেও মধ্যযুগে, বিশেষত

শনিবার, ১৪ আগস্ট, ২০১০

ভামোস ভামোস 'আর-জিতি-না'

লিখেছেন কুটুমবাড়ি (তারিখ: রবি, ২০১০-০৭-০৪ ০২:৩১) @ সচলায়তন
ক্যাটেগরী: |
১.
ভামোস ভামোস 'আর-জিতি-না'
কী ভয়ানক চাট্টি গোল!
লম্ফ-ঝম্ফ আর-দিতি-না?
দুলিয়ে মাজা, বাজিয়ে ঢোল!
২.
কই রে পিসি, কই রে ম্যাসি,
এইটা কী কয় 'মার-দিও-না'
নাচমু না আর ট্যাংগো বেশি
চাট্টি দিছ, আর-দিও-না!

শুক্রবার, ১৩ আগস্ট, ২০১০

ফেসবুক এবং নিষিদ্ধ গন্ধম

লিখেছেন কুটুমবাড়ি (তারিখ: রবি, ২০১০-০৬-০৬ ২২:১৩) @ সচলায়তন
ক্যাটেগরি : | | | |
দেশে কোনো সরকার আছে কি না এ নিয়ে অনেকেই সন্দিহান হয়ে পড়ছিলেন। সম্প্রতি সেইসব আপামর ম্যাঙ্গো পিপলকে দাঁতভাঙা জবাব দিয়েছে সরকার বাহাদুর। ফেসবুক আবার চালু হয়েছে দেশে। সরকার যে দেশে ভালো কিছু চালু করতে পারেন তা আরও একবার প্রমাণিত হলো।
অনেক মুখপোড়াই বলেন যে সরকারের হ্যাডম নাই এম্রিকারে চটায়। তারা যে কত বড় বোকার

প্রমিত বাংলা বানানরীতি, প্রশ্ন অপরিমিত : প্রয়োজন, দায়, না বাতুলতা?

লিখেছেন কুটুমবাড়ি (তারিখ: মঙ্গল, ২০১০-০৬-২২ ০৮:০৭) @ সচলায়তন
ক্যাটেগরি :
‘বাংলা একাডেমী’ প্রবর্তিত প্রমিত বাংলা বানানরীতি সম্বন্ধে না জেনেই তা উড়িয়ে দেবার একটা প্রবল প্রবণতা রয়েছে আমাদের মধ্যে। বাংলা ভাষায় একটা প্রমিত বানানরীতি যে প্রায় দাঁড়িয়ে গেছে তা মেনে নিতেও আমাদের ভীষণ আপত্তি। একটা ভাষা যদি তার সব ব্যবহারকারীর জন্য হয় তো তার বানানের ক্ষেত্রে একটা মানরীতিই সব থেকে নিরাপদ যা সকলের জন্য সহজবোধ্য। প্রমিত বানানরীতি অনুসরণ না করার অন্ধ প্রতিজ্ঞা

আমি ডাক্তার নই

লিখেছেন কুটুমবাড়ি (তারিখ: রবি, ২০১০-০৬-১৩ ২৩:৩৫) @ সচলায়তন 
রোবটরা আমাকে ভালোবাসে।
অবশ্য রোবটদের পক্ষে যতটা সম্ভব ততটা। এবং জৈবনিক বিচারে, অবশ্যই। আমার চেহারায় নাদুশনুদুশ শিশুসুলভ একটা ব্যাপার আছে। হয়তো এটা ওদের কপোট্রনিক মস্তিষ্কের বাবাসুলভ প্রবৃত্তিকে জাগিয়ে তোলে। যার দরুন তারা আমার প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য হয়। আর এ ব্যাপারটা আমার দায়িত্ব পালনে খুবই সাহায্য করে।
বসার ঘরের মাঝখানে অনড় পড়ে থাকা

বামন ভুত

লিখেছেন কুটুমবাড়ি (তারিখ: বিষ্যুদ, ২০১০-০৬-১৭ ২০:১৭) @ সচলায়তন
ক্যাটেগরি : | | | |
একরাশ অস্বস্তি নিয়ে ঘুম ভাঙল রুদ্রের। প্রথমে কিছুক্ষণ কিছুই ঠাহর করে উঠতে পারল না। তারপর চোখ গেল হাতঘড়ির দিকে। সকাল ছয়টা বেজে পনেরো মিনিট। ব্যাপার কি, এত সকালে তো তার ঘুম ভাঙে না! এতক্ষণে ঘরের কোনার গাছটি লক্ষ করল সে। গাছ! তার শোবার ঘরের ভেতর গাছ আসল কোত্থেকে?
সাথে সাথে তড়াক করে বিছানায় উঠে বসল রুদ্র।
ঘরের মধ্যে একটি খুদে মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। মেরেকেটে দেড় ফুট লম্বা হবে কি না সন্দেহ। পরনে কটকটে হলুদ

স্বর্গের টিকিট

লিখেছেন কুটুমবাড়ি (তারিখ: রবি, ২০১০-০৬-২৭ ১৭:৪৪) @ সচলায়তন
ক্যাটেগরি : | | | | |

স্বর্গে ভিড় বেড়ে গিয়েছিল খুব। একটি সিদ্ধান্ত নেয়া হলো শুধু এক দিনের জন্য। ওইদিন স্বর্গে ঢুকতে হলে একটি বিশেষ শর্ত পূরণ করতে হবে।  শর্ত এই যে, মৃত্যুটা হতে হবে চরম দুর্ভাগ্যজনক কোনো দিনে।

বিচারের দায়িত্ব পেলেন জোনা পুত্র সেন্ট পিটার। যথারীতি তিনি স্বর্গের দুয়ারে বসে আছেন। লোকজন লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে স্বর্গের টিকিট পাওয়ার অপেক্ষায়। লাইনের প্রথম লোকটা মধ্যবয়স্ক, মাথাভর্তি উসকো-খুসকো চুল। সেন্ট পিটার তাকে জিজ্ঞেস করলেন, 'বলো, তোমার জীবনের শেষ দিনটা কেমন ছিল?'

লোকটা বলল, 'ভয়ংকর! আমার বউয়ের বয়স ছিল আমার চেয়ে অনেক কম। তার ওপর বেজায় সুন্দরী। প্রতিবেশী অনেকেরই কুনজর ছিল তার দিকে, তাই তাকে চোখে চোখে রাখতে হতো। একসময় আমার সন্দেহ হলো এক প্রতিবেশীর সাথে তার ইটিশপিটিশ চলছে। তক্কে তক্কে রইলাম। একদিন বউকে শহরের বাইরে যাবার কথা বলে বাসা থেকে বের হলাম। আমি নিশ্চিত ছিলাম সে এই সুযোগটা নেবে, তাই তাড়াতাড়িই বাসায় চলে এলাম সেদিন। কিন্তু সারা বাড়ি তন্ন তন্ন করে খুঁজেও ওই রাস্কেলটাকে দেখতে পেলাম না। শেষে খুঁজতে খুঁজতে ব্যালকনিতে গেলাম। আমাদের ফ্ল্যাটটা ছিল বারো তলায়। ও মাগো, দেখি কি সেই খচ্চরটা ব্যালকনি থেকে ঝুলছে! আমি ঘরের ভেতর থেকে ইয়া বড় একটা হাতুড়ি নিয়ে এসে পেটাতে শুরু করলাম তার হাতের ওপর। সে গর্দভটা নিচে পড়ল ঠিকই, কিন্তু একটা ঝোপের ওপর গিয়ে পড়ল। তাই এবার ঘরের ভেতর গিয়ে আস্ত ফ্রিজটা তুলে এনে তার ওপর ছুড়ে মারলাম। অব্যর্থ নিশানা! ওটা সোজা তার মাথার ওপর গিয়ে পড়ল। কিন্তু এ ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় আমার হার্ট অ্যাটাক হলো। আর মর্ত্যের মায়া কাটিয়ে আমি সোজা চলে এলাম এখানে।'

সেন্ট পিটার অস্বীকার করতে পারলেন না যে এটা সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক দিন ছিল তার জন্য। তাই অন্যায় করা সত্ত্বেও তাকে ভেতরে ঢুকতে দিলেন। ওইদিন আরও যাদের মৃত্যু হয়েছিল তারা অপেক্ষা করছে কখন টিকিট পাবে। তিনি লাইনের দ্বিতীয় ব্যক্তিটিকে ডাকলেন।

'সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক ছিল সেই দিনটি।' দ্বিতীয় ব্যক্তিটি বলল। 'আমি আমার তেরো তলার ফ্ল্যাটের ব্যালকনিতে সামান্য ব্যায়াম করছিলাম। অসাবধানে উবু হতে গিয়ে রেলিং টপকে পড়ে যাই। যা হোক, কোনোমতে আমি নিচের ফ্ল্যাটের ব্যালকনি থেকে ঝুলছিলাম। কিন্তু কোত্থেকে এক উন্মাদ এসে আমার হাতের ওপর হাতুড়ি দিয়ে পেটাতে শুরু করে। সৌভাগ্যবশত আমি কিছু ঝোপঝাড়ের ওপর গিয়ে পড়ি। কিন্তু, ওই পাগলটা এর পর আমার ওপর একটা ফ্রিজ ছুড়ে মারে!'

সেন্ট পিটার মুখ টিপে হাসলেন। তবে ঢুকতে দিলেন একেও। মনে মনে ভাবছেন তাঁর কাজটা সত্যিই উপভোগ্য হয়ে উঠতে শুরু করেছে। 'তোমার জীবনের শেষ দিনটা কেমন কেটেছিল?' তিনি জিজ্ঞেস করলেন লাইনে দাঁড়ানো তৃতীয় ব্যক্তিটিকে।

'বলছি। ছবিটা মনে মনে কল্পনা করুন, আমি নগ্ন, একটা ফ্রিজের ভেতর লুকিয়ে আছি....'

*একটি বিদেশি কৌতুক অবলম্বনে রচিত

শুক্রবার, ৬ আগস্ট, ২০১০

বাংলাদেশ ভ্রমণ গাইড- ৪ | আবহাওয়া |

লিখেছেন কুটুমবাড়ি (তারিখ: শুক্র, ২০১০-০৮-০৬ ২০:১৪) @ সচলায়তন
ক্যাটেগরি : | | | | | | | | | |

কখন বেড়াবেন

ষড়ঋতু এখন শুধু পঞ্জিকার পাতায়, কার্যত বাংলাদেশে ঋতু বা মৌসুম চোখে পড়ে ৪টি—বর্ষা (জুন-সেপ্টেম্বর), শরৎ (অক্টোবর-নভেম্বর), শীত (ডিসেম্বর-ফেব্রুয়ারি), এবং গ্রীষ্ম মৌসুম (মার্চ-মে)।

ঘোরাঘুরির শ্রেষ্ঠ সময় মধ্য-অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। ঘন নীল আকাশ, রোদেলা দিন এবং শুষ্ক আবহাওয়া নিয়ে এই সময় দিনের গড় তাপমাত্রা থাকে ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এপ্রিলের মধ্যে এই তাপমাত্রা বেড়ে দাঁড়ায়

বুধবার, ২৮ জুলাই, ২০১০

বাংলাদেশ ভ্রমণ গাইড- ৩

লিখেছেন কুটুমবাড়ি (তারিখ: বিষ্যুদ, ২০১০-০৭-২৯ ০৮:৩২) @ সচলায়তন
ক্যাটেগরি : | | | | | | | | |
দক্ষিণ এশিয়ার দীর্ঘতম দুটি নদী—গঙ্গা আর ব্রহ্মপুত্র যেখানে বঙ্গোপসাগরে মিশেছে সেখানেই কালের পরিক্রমায় গড়ে ওঠা বঙ্গীয় ব-দ্বীপ। এই গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র মোহনা অঞ্চলে প্রায় ৩০০০ বছর বা তারও পূর্ব থেকে যে জনগোষ্ঠীর বসবাস, তা-ই ইতিহাসের নানান চড়াই উৎরাই পেরিয়ে এসে দাঁড়িয়েছে বর্তমানের স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশরূপে। ভৌগোলিক বিচারে বাংলাদেশের অবস্থান দক্ষিণ এশিয়ায়, ভারত ও মিয়ানমারের মাঝখানে। এর ভূখন্ড ১ লক্ষ ৪৭ হাজার ৫৭০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত, অর্থাৎ প্রায় ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের (আয়তন প্রায় ১ লক্ষ ৫১ হাজার ১৭০ বর্গ কিলোমিটার) সমান। [তথ্যসূত্র : [url=http://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%82%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B6#.E0.A6.AD.E0.A7.82.E0.A6.97.E0.A7.8B.E0.A6.B2_.E0.A6.93_.E0.A6.9C.E0.A6.B2.E0.A6.AC.E0.A6.BE.E0.A6.AF.E0.A6.BC.E0.A7.81]উইকিপিডিয়া][/url]

শনিবার, ২৪ জুলাই, ২০১০

বাংলাদেশ ভ্রমণ গাইড- ২ | বাংলাদেশ এল কোথা থেকে |

লিখেছেন কুটুমবাড়ি (তারিখ: রবি, ২০১০-০৭-২৫ ২৩:৪৮) @ সচলায়তন
ক্যাটেগরী: | | | |

[i]বাংলাদেশের অতীত অধ্যায় মানেই নাটকীয় পালাবদলের ইতিবৃত্ত; হাঙ্গামা ও শান্তি, প্রাচুর্য ও দারিদ্র্যের এমন পিঠাপিঠি অবস্থান বিশ্ব-ইতিহাসেরই বিরল ঘটনা। বাংলাদেশ কখনও সাংস্কৃতিক মহিমায় সমুজ্জ্বল, কখনও যুদ্ধক্লান্ত ও ধ্বংসোন্মুখ। এই দেশের হুড়হাঙ্গামাপূর্ণ ইতিহাস অন্তর্দন্ধ, একের পর এক বহিরাক্রমণ এবং মহাপরাক্রমশালী সাম্রাজ্যের উত্থান ও পতনের সাক্ষী।[/i]

মঙ্গলবার, ২০ জুলাই, ২০১০

বাংলাদেশ ভ্রমণ গাইড- ১ | সংস্কৃতি ও স্থাপত্যরীতি |

লিখেছেন কুটুমবাড়ি (তারিখ: বুধ, ২০১০-০৭-২১ ০২:৫৩) @ সচলায়তন
ক্যাটেগরী: | | |

[size=24]ঠিকানা বাংলাদেশ![/size]

পাহাড় ও অরণ্য, মসজিদ ও মন্দির, সৈকত ও দ্বীপ—এই সবকিছু ছাপিয়ে যে পরিচয়টি সবচেয়ে বড় হয়ে ওঠে বাংলাদেশের, তা হচ্ছে তার নামটি—বাংলাদেশ! একসময় ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, দারিদ্র্য, দুর্নীতি আর উপচে পড়া ভিড়ের জন্যই বেশি পরিচিত ছিলাম আমরা। ধীরে ধীরে সেই ভাবমূর্তির পরিবর্তন ঘটতে শুরু করেছে। আমরা এখন মাথা তুলে দাঁড়াতে শিখেছি, ক্রমেই হয়ে উঠছি বিশ্বায়নের সক্রিয় অংশীদার। ঐতিহাসিক করুণ পরিণতি বা উন্নয়নের পথে বারবার হোঁচট খাওয়া—কোনো কিছুই দমাতে পারেনি আমাদের। এখন আর বাংলাদেশ মানেই তলাবিহীন ঝুড়ি নয়—যেমনটি একসময় ধারণা ছিল পশ্চিমা গণমাধ্যমের। বাংলাদেশ এখন ভালো খবর তৈরি করতেও শিখেছে।

সোমবার, ১৯ জুলাই, ২০১০

দ্য পিকচার অব ডোরিয়ান গ্রে | ৭ম পর্ব |

বিপর্যয়

গাড়িতে চড়ে থিয়েটারের উদ্দেশে চলেছেন দুই বন্ধু—লর্ড হেনরি এবং বাসিল। ডোরিয়ানও আছে সাথে। তাঁরা দুজনই একটু উৎকণ্ঠায় আছেন সিবিল ভেনের কথা ভেবে। সত্যি বলতে কি, এমন একটি তন্বী সুন্দরী, যে কিনা ডোরিয়ানের হৃদয় দখল করে নিয়েছে, কৌতূহলী করে তুলছে তাদের দুজনকে। মেয়েটি কি তাঁদেরও আকৃষ্ট করতে পারবে? নাকি ডোরিয়ান আরও যোগ্য স্ত্রী বেছে নেয়ার সুযোগ হাতছাড়া করছে?

একজন হৃষ্টপুষ্ট ম্যানেজার, দুহাতে রত্নখচিত আংটি-পরা, পথ দেখিয়ে তাঁদের নির্ধারিত

শনিবার, ১৭ জুলাই, ২০১০

ভেতো বাঙালি

আমি এক জন্ম-কুঁড়ে
ভাবছি বসে এক দুপুরে
কোন বা পথে এভারেস্টে যাই
ও মন রে...

থাকব না তো আস্তাকুড়ে
উঠব ঠিকই জগৎ ফুড়ে
আমি আর আমাতে যে নাই
ও মন রে...

এই না ভেবে দিলাম পাড়া
হঠাৎ হলাম বিছানা ছাড়া
আমি কি হায় স্বপ্ন দেখছি, সাঁই
ও মন রে...

মনটা হলো এমন তেতো
চিরকালই বাঙালি ভেতো
স্বপ্ন দেখার সাধ্য আমার নাই
ও মন রে...

কুটুমবাড়ি
mhdrakib@gmail.com

আমি 'মার-দিও-না' বলচি

লিখেছেন কুটুমবাড়ি (তারিখ: সোম, ২০১০-০৭-০৫ ২১:৪৬)@ সচলায়তন
ক্যাটেগরী: ব্লগরব্লগর | সমসাময়িক | রম্যরচনা | ফুটবল | বিশ্বকাপ

আমি 'মার-দিও-না' বলচি। আমি এখুনো ভামোস ভামোস আর-জিতি-না ফুটবল দলের বল ম্যানেজার আচি। আমার দল বিশ্বকাপ ফুটবল থেকে অসময়ে বিদায় নিয়েচে। শুনেচি অনেকেই আনন্দে বিজয় মিচিল করচেন। আমি নিজেও বিশ্বকাপ থেকে ব্রাজিলের বিদায়ে অনেকেরই কোলে গিয়ে উঠেচিলুম। আর এতে দোষেরই বা কী আচে!

কিন্তু যারা আমাকে নিন্দোচ্চেন তাদেরকে একটু পেচনে তাকাতে বলি। ঈশ্বরের হাত এবং আমার পা দিয়ে আগেও আমি বিশ্বকাপ

দ্য পিকচার অব ডোরিয়ান গ্রে | ১-৬ পর্ব |

লিখেছেন কুটুমবাড়ি (তারিখ: শুক্র, ২০১০-০৭-০৯ ২০:০৮)@ সচলায়তন
ক্যাটেগরী: ব্লগরব্লগর

তার সম্পর্কে আশ্চর্য সব গল্প লন্ডনজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। সে দেখতে এখনও পবিত্র, কিন্তু আসলেই কি তাই?

সে তার প্রতিটি মর্জি, প্রতিটি বাতিক, প্রতিটি চাহিদা পূরণ করে। সব ইন্দ্রিয়ের গভীর রহস্য সে উন্মোচন করে। অসৎ চরিত্র নিয়ে, সে ধ্বংস ও রোমাঞ্চের উন্মত্ত ক্ষুধা মিটিয়ে চলে!

কিন্তু তার সব সম্পদ, সব সঞ্চয়—পলায়নের উপায় মাত্র। যেখানে তার শৈশব কেটেছে—সেই নিঃসঙ্গ, তালাবদ্ধ ঘরটার দেয়ালে আঁটা তার গন্তব্য। ভয়ংকর ছবিটা সে ঝুলিয়ে রেখেছে সেখানে, যার ধারাবাহিক বিবর্তন প্রকাশ করছে তার নৈতিক অধঃপতনকে। দৃষ্টি থেকে আড়ালে রাখতে, সে যবনিকা টেনে রেখেছে সেটার ওপর।

তার কাছে, পঙ্কিলতাই এখন সুন্দর!

একসময়ের নিষ্পাপ এই ছেলেটার এ কী হলো? শুধুমাত্র ডোরিয়ান গ্রে জানে এর উত্তর। লর্ড হেনরির বই তাকে দূষিত করে ফেলেছে!

শুক্রবার, ১৬ জুলাই, ২০১০

বানানায়তন ১ : ই-কার বনাম ঈ-কার

লিখেছেন (তারিখ: বিষ্যুদ, ২০১০-০৭-০১ ২২:৩১) @ সচলায়তন
ক্যাটেগরী : ব্লগরব্লগর | চিন্তাভাবনা | ই-কার না ঈ-কার | বাংলা | বানান | বানানরীতি | ব্যাকরণ | ভাষাবিজ্ঞান

আমাদের হাতে একটি প্রমিত বাংলা বানানরীতি আছে। অথচ এত কষ্টের মাতৃভাষায় যে সুখ করে কিছু লিখব বা পড়ব! বানানের দৌরাত্ম্যে সে সুযোগ খুবই কম। সারা বিশ্বেই বানান উচ্চারণ-নির্ভর নয়। ব্যাকরণের ছাপ তাতে থাকবেই থাকবে। কিন্তু বাংলা বানানের বিশৃঙ্খলা যেন কিছুতেই কমবার নয়।

যা হোক আশার কথা হলো একটি গ্রহণযোগ্য বানানরীতি আমাদের হাতে আছে। বাংলা একাডেমীর বানানরীতিটি ভাষাবৈজ্ঞানিক এবং প্রগতিশীল। এই রীতিটি ভাষার ব্যবহারকে
স্বর্গের টিকিট

লিখেছেন কুটুমবাড়ি (তারিখ: রবি, ২০১০-০৬-২৭ ১৭:৪৪)@ সচলায়তন
ক্যাটেগরী: গল্প | সাহিত্য | রম্যরচনা | অণুগল্প | স্বর্গ | যুবা (১৮ বছর বা তদুর্দ্ধ)

স্বর্গে ভিড় খুব বেড়ে গিয়েছিল। একটি সিদ্ধান্ত নেয়া হলো শুধু এক দিনের জন্য। ওইদিন স্বর্গে ঢুকতে হলে যে-কাউকে একটি বিশেষ শর্ত পূরণ করতে হবে। আর তা হলো তার মৃত্যুটা হতে হবে চরম দুর্ভাগ্যজনক কোনো দিনে।

বিচারের দায়িত্ব পেলেন জোনা পুত্র সেন্ট পিটার। যথারীতি তিনি স্বর্গের দুয়ারে বসে আছেন। লোকজন লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে স্বর্গের টিকিট পাওয়ার অপেক্ষায়। লাইনের প্রথম লোকটা মধ্যবয়স্ক, মাথাভর্তি উসকো-খুসকো চুল। সেন্ট পিটার তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘বলো, তোমার জীবনের শেষ দিনটা কেমন ছিল?’

লোকটা বলল, ‘ভয়ঙ্কর! আমার বউয়ের বয়স ছিল আমার চেয়ে অনেক কম। তার ওপর বেজায় সুন্দরী। প্রতিবেশী অনেকেরই কুনজর ছিল তার দিকে। তাই তাকে চোখে চোখে রাখতে হতো। একসময় আমার সন্দেহ হলো এক প্রতিবেশীর সাথে তার ইটিশপিটিশ চলছে। তক্কে তক্কে রইলাম। একদিন বউকে শহরের বাইরে যাবার কথা বলে বাসা থেকে বের হলাম। আমি নিশ্চিত ছিলাম সে এই সুযোগটা নেবে। তাই তাড়াতাড়িই বাসায় চলে এলাম সেদিন। কিন্তু সারা বাড়ি তন্ন তন্ন করে খুঁজেও ওই রাস্কেলটাকে দেখতে পেলাম না। শেষে খুঁজতে খুঁজতে ব্যালকনিতে গেলাম। আমাদের ফ্ল্যাটটা ছিল বারো তলায়। ও মাগো, দেখি কি সেই খচ্চরটা ব্যালকনি থেকে ঝুলছে! আমি ঘরের ভেতর থেকে ইয়া বড় একটা হাতুড়ি নিয়ে এসে পেটাতে শুরু করলাম তার হাতের ওপর। সে গর্দভটা নিচে পড়ল ঠিকই, কিন্তু একটা ঝোপের ওপর গিয়ে পড়ল। তাই এবার ঘরের ভেতর গিয়ে আস্ত ফ্রিজটা তুলে এনে তার ওপর ছুড়ে মারলাম। অব্যর্থ নিশানা! ওটা সোজা তার মাথার ওপর গিয়ে পড়ল। কিন্তু এ ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় আমার হার্ট অ্যাটাক হলো। আমিও মর্ত্যের মায়া কাটিয়ে আমি সোজা চলে এলাম এখানে।’

সেন্ট পিটার অস্বীকার করতে পারলেন না যে এটা সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক দিন ছিল তার জন্য। তাই অন্যায় করা সত্ত্বেও তাকে ভেতরে ঢুকতে দিলেন। ওইদিন আরও যাদের মৃত্যু হয়েছিল তারা অপেক্ষা করছে কখন টিকিট পাবে। তিনি লাইনের দ্বিতীয় ব্যক্তিটিকে ডাকলেন।

‘সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক ছিল সেই দিনটি।’ দ্বিতীয় ব্যক্তিটি বলল। ‘আমি আমার তেরো তলার ফ্ল্যাটের ব্যালকনিতে সামান্য ব্যায়াম করছিলাম। অসাবধানে উবু হতে গিয়ে রেলিং টপকে পড়ে যাই। যা হোক, কোনোমতে আমি নিচের ফ্ল্যাটের ব্যালকনি থেকে ঝুলছিলাম। কিন্তু কোত্থেকে এক উন্মাদ এসে আমার হাতের ওপর হাতুড়ি দিয়ে পেটাতে শুরু করে। সৌভাগ্যবশত আমি কিছু ঝোপঝাড়ের ওপর গিয়ে পড়ি। কিন্তু, ওই পাগলটা এর পর আমার ওপর একটা ফ্রিজ ছুড়ে মারে!’

সেন্ট পিটার মুখ টিপে হাসলেন। তবে ঢুকতে দিলেন একেও। মনে মনে ভাবছেন তাঁর কাজটা সত্যিই উপভোগ্য হয়ে উঠতে শুরু করেছে। ‘তোমার জীবনের শেষ দিনটা কেমন কেটেছিল?’ তিনি জিজ্ঞেস করলেন লাইনে দাঁড়ানো তৃতীয় ব্যক্তিটিকে।

‘বলছি। ছবিটা মনে মনে কল্পনা করুন, আমি নগ্ন, একটা ফ্রিজের ভেতর লুকিয়ে আছি....’
প্রমিত বাংলা বানানরীতি, প্রশ্ন অপরিমিত : প্রয়োজন, দায়, না বাতুলতা?

লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: মঙ্গল, ২০১০-০৬-২২ ০৮:০৭)@ সচলায়তন
ক্যাটেগরী: ব্লগরব্লগর

‘বাংলা একাডেমী’ প্রবর্তিত প্রমিত বাংলা বানানরীতি সম্বন্ধে না জেনেই তা উড়িয়ে দেবার একটা প্রবল প্রবণতা রয়েছে আমাদের মধ্যে। বাংলা ভাষায় একটা প্রমিত বানানরীতি যে প্রায় দাঁড়িয়ে গেছে তা মেনে নিতেও আমাদের ভীষণ আপত্তি। একটা ভাষা যদি তার সব ব্যবহারকারীর জন্য হয় তো তার বানানের ক্ষেত্রে একটা মানরীতিই সব থেকে নিরাপদ যা সকলের জন্য সহজবোধ্য। প্রমিত বানানরীতি অনুসরণ না করার অন্ধ প্রতিজ্ঞা ও গোয়ার্তুমি বাংলাকে একটা জগাখিচুড়ি ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে ছেড়েছে। ভাষার ক্ষেত্রে হয়তো রীতি তৈরিই হয় ভাঙার জন্য, তাতে হয়তো রীতিরই লাভ, কারণ সে রীতির গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু তা যাচাই হয়ে যায় এতে। কিন্তু তা যদি হয় বিচার-বিবেচনাহীন, অগ্রহণযোগ্য রীতির রক্ষাকবচ, তাহলে বাংলা ভাষার মানদণ্ড কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা ভেবে দেখবার বিষয়।

প্রথমেই বলে নিই অতিরিক্ত বানান-চিন্তাকে যাঁরা শুচিবায়ুগ্রস্ততা বলে পাশ কাটিয়ে যেতে চান আমি তাঁদের দলে নই। মানসম্পন্ন লেখাও ভুল/অপ্রমিত বানানের কোপে পড়ে পাঠযোগ্যতা হারিয়ে ফেলতে পারে—এই আমার বিশ্বাস। হ্যাঁ, ভুল বানান থাকবে, তবে তা বড়জোর ডায়েরির পাতায় বা বাজারের ফর্দতেই সীমাবদ্ধ থাকা উচিত। সাইনবোর্ড-ফেস্টুন-বিজ্ঞাপন কি গণমাধ্যম বা সাহিত্য চর্চার ক্ষেত্রে ভুল বানানের দৌরাত্ম কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না।

যাঁরা ব্লগে লেখালেখি করছেন, তাঁরা কতখানি সচেতন বানানের বিষয়ে? আমি শব্দপ্রেমী, বানান ভুল আমাকে পীড়িত করে। হয়তো আমার মতো অনেক পাঠকই বিরক্ত হন। তবে ভুল তো ভুলই, আমার আপত্তি ইচ্ছাকৃত ভুল বা অপ্রমিত বানানে।

অনেকেই প্রমিত বানানরীতিকে বাড়তি দায় বলে মনে করতে পারেন। যেখানে বাংলায় শুদ্ধ বানানে লেখাই কষ্টকর, সেখানে প্রমিত বানানরীতি চাপিয়ে দেওয়াটা বাড়াবাড়ি মনে হতে পারে। তা ছাড়া প্রমিত বানানরীতি ভাষাকে গণ্ডিবদ্ধ করে ফেলবে বলেও অনেকের আশঙ্কা থাকতে পারে। এ আশঙ্কা কতটা যৌক্তিক আর কতটা অজ্ঞতা/উন্নাসিকতার পরিচয় তা নির্ণয় করার জন্যই এই আপাত বেহুদা লেখাটি পোস্টাতে হলো।

বাংলা ভাষায় পণ্ডিতের সংখ্যা বেশি, তাই সবাই নিজস্ব বানানরীতি রচনা করেন, আর বাংলা ভাষার/বানানের কর্ণধার কর্তৃক প্রণীত প্রমিত বানানরীতিকে থোরাই কেয়ার করেন। যদিও প্রমিতকরণের জন্য যে পর্ষদ গঠন করা হয়েছিল, সেই পর্ষদও কিছু কিছু বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি। তেমনি জাতীয় শিক্ষাবোর্ডের বানানরীতিও অনেক ক্ষেত্রে প্রমিত বানানরীতির অনুরূপ নয়। পাশাপাশি পত্রিকাগুলোর যথেচ্ছাচার তো আছেই। এমন অবস্থায় বাংলা ভাষা ব্যবহারকারীরা তো দিশেহারা হবেনই।

তবে আশার কথা হলো, যথেচ্ছাচার সত্ত্বেও ১৯৯৪ সালের জানুয়ারি মাসে ‘বাংলা একাডেমী’ বানান বিষয়ে যে নীতিমালাটি চূড়ান্ত করে তা পরবর্তীকালে পত্র-পত্রিকাগুলোকে অনুসরণ করতে দেখা যায়, যদিও পুরোপুরি নয় [২০০০ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রকাশিত 'বাংলা একাডেমী ব্যবহারিক বাংলা অভিধানে'র (পরিমার্জিত সংস্করণ) ‘পরিশিষ্ট’ হিসেবে মুদ্রণের পূর্বে ওই বছরেরই নভেম্বর মাসে ‘প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম’ পুনরায় সংশোধন করা হয়। এখন প্রমিত বানানরীতির এই রূপটিই চালু আছে]। যতটুকু ব্যত্যয় চোখে পড়ে তা হতে পারে অজ্ঞাতসারে, অথবা 'নিজস্ব স্টাইল’-এর কারণে। প্রমিত বানানরীতি গ্রহণ ও ‘কোনো অসঙ্গতি থেকে থাকলে’ তা সংশোধনের জন্য একটা ঐকমত্য প্রয়োজন। সবাই প্রমিত বানানরীতিকে গ্রহণ করলে আপনা-আপনিই তা জনপ্রিয় হয়ে উঠবে ও চর্চিত হবে।

নিচে প্রশ্নোত্তর-আকারে 'বাংলা একাডেমী' প্রণীত প্রমিত বানানরীতি অনুসরণের যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করা হলো। ভবিষ্যতে প্রমিত বানানের নিয়মসমূহ ও সেগুলো মেনে চলায় আমাদের কী লাভ হবে তা নিয়ে আলোচনা করার ইচ্ছা রইল। দু-একটি নিয়মে আমার নিজেরও আপত্তি আছে, সেগুলোও আলোচনায় উঠে আসবে। এ ছাড়া সবার সম্মিলিত যুক্তিতর্কের মাধ্যমে আমরা প্রত্যেকেই কিছু-না-কিছু অজানা বিষয় জানতে পারব ও নিজেদের কোনো ভুল থেকে থাকলে তা সংশোধন করতে পারব বলে আশা করছি। যাঁরা কোনো-না-কোনোভাবে লেখালেখির সাথে যুক্ত তাঁদের সবাইকে মতামত জানাতে আহ্বান জানিয়ে রাখছি এই সুযোগে।

প্রশ্ন : ১. প্রমিত বাংলা বানানরীতি প্রণয়নের আদৌ কোনো প্রয়োজন ছিল কি?

উত্তর : অনেক চলমান ও বর্ধিষ্ণু ভাষাতেই দীর্ঘকাল জুড়ে ধীরে ধীরে বানানের কিছু কিছু পরিবর্তন হতে দেখা যায়। তখন একসময়ে বানানের নিয়ম নতুন করে বেঁধে দেওয়ার বা সূত্রবদ্ধ করার প্রয়োজন হয়। এ-যাবৎ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়-নির্দেশিত নিয়ম আমরা অনুসরণ করে চলেছি। কিন্তু আধুনিক কালের দাবি অনুযায়ী, নানা বানানের যেসব বিশৃঙখলা ও বিভ্রান্তি আমরা দেখছি সেই পরিপ্রেক্ষিতে বানানের নিয়মগুলিকে আর একবার সূত্রবদ্ধ করার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। বিশেষত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়-নির্দেশিত নিয়মে বিকল্প ছিল বেশি। বিকল্প হয়তো পরিহার করা যাবে না, কিন্তু যথাসাধ্য তা কমিয়ে আনা দরকার। এইসব কারণে ‘বাংলা একাডেমী’ বাংলা বানানের বর্তমান নিয়ম নির্ধারণ করছে।

প্রশ্ন : ২. একই শব্দ একাধিক বানানরীতিতে লিখতে অসুবিধা কোথায়? মানুষের ভাষায় বৈচিত্র্য/ফ্লেক্সিব্লিটি থাকা প্রয়োজন, ওতে ভাষার প্রাণ বাড়ে।

উত্তর : প্রতি ভাষারই একটা স্ট্যান্ডার্ড বানানরীতি থাকে- খুব সহজ উদাহরণ হলো ইংরেজি; হয় ইউএস অথবা ব্রিটিশ রীতি, এর বাইরে আরেকটা রীতি তারা অনুসরণ করে কি না তা আমার জানা নেই। তাই বলে সে ভাষায় বৈচিত্র্য/ফ্লেক্সিব্লিটি-র কিছুমাত্র ঘাটতি আছে কি?

বাংলা ভাষায় হয়তো শব্দভাণ্ডার যথেষ্ট সমৃদ্ধ নয়। তবে বানানরীতিতে ভিন্নতা আনাটা কিছুতেই এ সমস্যার সমাধান হতে পারে না। তাতে বিভ্রান্তি বাড়বে বৈ কমবে না।

আমি মনে করি বানানের বিষয়টা একান্তই ভাষাতত্ত্ববিদের কাজ, তবে তারা কিন্তু কিছুতেই ভাষার গতি-প্রকৃতি নির্ধারণ করেন না, সে এক্তিয়ারও তাদের নেই। ভাষা পরিবর্তিত হয় গণ-মানুষের হাতে, লেখক-কবিরা তাতে আরও বেশি প্রাণ সঞ্চার করেন মাত্র। প্রমিত বানানরীতি লেখকের পায়ে বেড়ি পড়ানোর জন্য তৈরি করা হয়নি, এটা করা হয়েছে ভাষার শুদ্ধতা রক্ষা এবং সাধারণ মানুষের সুবিধার কথা ভেবেই।

ভাষাটা বিভিন্ন ব্যক্তির প্রকাশভঙ্গির ক্ষেত্রে বিভিন্ন হতে পারে এবং এটা হওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু মৌলিক বানানের ক্ষেত্রটা তো অভিন্ন করা যায়। এ নিয়মটা সবাই অনুসরণ করলে হয়তো পাঠক বিভ্রান্তিতে পড়বেন না এবং ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রে একটা সমতা বজায় থাকবে।

প্রশ্ন : ৩. ভাষার ক্ষেত্রে কিছু জিনিসকে ‘প্রমিত’ ঘোষণার একটা বড় সমস্যা হচ্ছে একই সঙ্গে অনেক কিছুকে ‘অপ্রমিত’ ঘোষণা করার ভার।

উত্তর : কিছু জিনিসকে ‘প্রমিত’ ঘোষণায় কোনো সমস্যা দেখছি না। হ্যাঁ, এর জন্য আরও গবেষণা প্রয়োজন হবে এ কথা সত্য। কিন্তু এটা তো চলমান প্রক্রিয়া, তাই না? এ পর্যন্ত যেসব বানান প্রমিত হিসেবে মোটামুটি প্রণিধানযোগ্য হয়েছে সেগুলোকে তো আমরা মেনে নিতে পারি এবং অনুসরণ করতে পারি। আর যেসব বানানকে শুদ্ধ/গ্রহণযোগ্য হিসেবে প্রমাণ করা যাচ্ছে না সেগুলো সবাই বর্জন করলে আপনা-আপনিই কালপরিক্রমায় হারিয়ে যাবে, আলাদা করে ‘অপ্রমিত’ ঘোষণার কোনো প্রয়োজন দেখছি না।

প্রশ্ন : ৪. প্রমিত বানানের আগে রচিত হাজার হাজার বইয়ের কী হবে?

উত্তর : ভাষা একটি চলমান বিষয়। তা না-হলে ৫০ বছর আগের ভাষা আর বর্তমান ভাষা একই রকম হতো। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস হাজার বছরের পুরোনো। পুরোনো সেসব বইয়ের বানান সংস্কারের কথা কেউই বলছেন না, বরং সেই অমূল্য সাহিত্যভাণ্ডার যেমন আছে তেমন থাকাটাই সবার কাম্য। সেই এত দিন ধরে বাংলা বানান যে ক্রমাগত রূপ পরিবর্তন করে চলেছে তা বাংলা ভাষার জীবনীশক্তি এবং প্রবহমানতারই বহিঃপ্রকাশ। তাহলে এ-প্রজন্ম ঠিক কোন বানানরীতিটি অনুসরণ করবে তা নির্ধারণের প্রয়োজনীয়তা নিশ্চয়ই কেউ অস্বীকার করতে পারবেন না। ঠিক এখানেই প্রমিত বানানরীতি মেনে নেওয়ার প্রশ্নটি আসছে।

প্রশ্ন : ৫. রীতি যে সবাইকে মানতেই হবে এমন নয়। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় রীতির অনেকগুলো বানান মানতেন না।

উত্তর : প্রমিত বানানরীতির কোনো সুনির্দিষ্ট নিয়মের বিপক্ষে আপনার যদি কোনো যু্ক্তিগ্রাহ্য মতামত থাকে তাহলে ভিন্ন কথা। নতুবা কেন মেনে নেবেন না? আপনার এ ধরনের ভূমিকায় আপনার প্রিয় মাতৃভাষাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে, আশা করি শুধুমাত্র ‘রীতি ভাঙার জন্য রীতি অমান্য’ করার কাজটি করবেন না। রীতি যদি ভাঙতেই হয়, তাহলে তথাকথিত যেসব শুদ্ধ (কিন্তু অপ্রমাণিত ও কম গ্রহণযোগ্য) রীতি এখনও আমাদের শৃঙ্খলিত করে রেখেছে সেগুলি ভাঙুন।

প্রশ্ন : ৬. ভাষা ব্যবহারকারীদের অন্তত অর্ধেক নিজের সারা শিক্ষাজীবন এই প্রমিত বানানরীতি ছাড়াই পার করে আসেননি? হঠাৎ কোনো প্রতিষ্ঠান বা চার-পাঁচজন মানুষ লাখ লাখ লোকের ২০ বছরের শিক্ষাকে ভুল বলবার ধৃষ্টতা দেখাতে পারে না।

উত্তর : ‘বাংলা একাডেমী’ কোনো ভুঁইফোড় প্রতিষ্ঠান নয়, আমাদের জাতীয় পর্যায়ের সেরা মননশীল ব্যক্তিরা প্রমিত বানানরীতি প্রণয়নের সাথে জড়িত। মানা না-মানার দায়িত্ব আপনার। যিনি না-মানেন তিনি বুঝেই না-মানেন, আর যিনি না-বুঝে না-মানেন, তিনি নিঃসন্দেহে ভুলবশত না-মানেন। ‘বাংলা একাডেমী’র প্রমিত বানানরীতির বাইরের বানানকে যে-কেউ ভুল বানান বলে চ্যালেঞ্জ করতে পারবেন সহজেই, অন্তত আমি তা-ই মনে করি।

প্রশ্ন : ৭. ‘বাংলা একাডমী’ যে বিভ্রান্ত তার প্রমাণ তার নামের ‘একাডেমী’ বানানটিই।

উত্তর : কোনো ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের নামের ক্ষেত্রে প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম প্রযোজ্য নয়। কাজেই ‘বাংলা একাডেমী’ তার নাম পরিবর্তন করতে বাধ্য নয়। হঠাৎ করে এত পুরোনো একটি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে নাম পরিবর্তন করা সম্ভব কি না তাও ভেবে দেখবার বিষয়। তবে বিভ্রান্তি এড়ানোর জন্য আমি ‘বাংলা একাডেমী’র নাম পরিবর্তনের পক্ষে। এবং অদূর ভবিষ্যতে হয়তো আমরা তা-ই দেখতে পাব।

***
বাংলা ভাষার মতো এতগুলো ভিন্ন ভিন্ন বানানরীতি বিশ্বের আর কোনো ভাষায় আছে কি? আরও পরিতাপের বিষয় এই ভিন্ন ভিন্ন বানানকে শুদ্ধ বানানের ট্যাগ পরিয়ে রাখা হয়েছে আজ অব্দি। সত্যিকার অর্থে এতে কি বাংলা ভাষার কোনো লাভ হয়েছে পাঠকদের বিভ্রান্ত করা ছাড়া? বাংলাদেশের ভাষাতত্ত্ববিদ ও অভিধানবিশারদেরা কেউ কি শুনছেন আমাদের কথা? আমাদের সাধারণ পাঠকদের এই আর্তনাদ কি পৌঁছাচ্ছে আপনাদের কানে? আমরা প্রমিত বানানরীতি মেনে চলতে চাই, প্লিজ হেল্প করুন আমাদেরকে।

(চলবে...)

*তথ্যসূত্র ও কৃতজ্ঞতা : এই লেখাটির বেশ কিছু লাইন বিভিন্ন বাংলা ব্লগ সাইটের নাম না-জানা ব্লগারদের সাথে কথোপকথন ও ‘বাংলা একাডেমী ব্যবহারিক অভিধান’ থেকে সরাসরি কোট করা হয়েছে।
বামন ভুত

লিখেছেন কুটুমবাড়ি (তারিখ: বিষ্যুদ, ২০১০-০৬-১৭ ২০:১৭)@ সচলায়তন
ক্যাটেগরী: গল্প | সাহিত্য | ফিকশন | ভুতের গল্প | সববয়সী

একরাশ অস্বস্তি নিয়ে ঘুম ভাঙল রুদ্রের। প্রথমে কিছুক্ষণ কিছুই ঠাহর করে উঠতে পারল না। তারপর চোখ গেল হাতঘড়ির দিকে। সকাল ছয়টা বেজে পনেরো মিনিট। ব্যাপার কি, এত সকালে তো তার ঘুম ভাঙে না! এতক্ষণে ঘরের কোনার গাছটি লক্ষ করল সে। গাছ! তার শোবার ঘরের ভেতর গাছ আসল কোত্থেকে?

সাথে সাথে তড়াক করে বিছানায় উঠে বসল রুদ্র।

ঘরের মধ্যে একটি খুদে মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। মেরেকেটে দেড় ফুট লম্বা হবে কি না সন্দেহ। পরনে কটকটে হলুদ রঙের জ্যাকেট আর নীল প্যান্ট।

- আহ্! ঘুম ভাঙল তাহলে।

রুদ্র কী বলবে ভেবে পেল না। তাকিয়ে আছে হাঁ করে।

- অবাক হচ্ছ? অবশ্য অবাক হবারই কথা। আমি একজন পাতালবাসী বামন ভুত। তুমি এর আগে কখনও ভুত দেখনি মনে হচ্ছে? কী উদ্ভট ব্যাপার!

রুদ্র এখনও বিছানায় বসে আছে। কথার উত্তর দেবে কি, ভয়ে তার ব্রহ্মতালু পর্যন্ত শুকিয়ে গেছে।

- আরে ভেবো না, আগেও আমি এ ধরনের ঘটনা ঘটতে দেখেছি। আমার নাম আভান্তিকা রাপ্টাপুলাস। এসো পরিচিত হই।

বামন ভুতটি এখন তার বিছানার দিকে এগিয়ে আসছে!

রুদ্র খিঁচে বাথরুমের দিকে দৌড় দিল। হৃদপিণ্ড ধুকপুক করছে, তবু এর মধ্যেই তাকিয়ে দেখল পেছন দিকে। না, ভুতটা তাকে তাড়া করছে না। বাথরুমে ঢুকে দড়াম করে দরজা লাগিয়ে দিল ভেতর থেকে।

রাপ্টাপুলাস একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। খুবই অন্যমনস্ক দেখাচ্ছে তাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই অবশ্য মনোযোগ দেয়ার মতো একটা জিনিস খুঁজে পেল সে। ঘরের চতুর্দিকের দেয়ালে দুর্দান্ত সব তৈলচিত্র ঝোলানো। খুটিয়ে খুটিয়ে ছবিগুলো দেখতে শুরু করল সে, যেন কতই না জরুরি কাজ এটা!

***

শেষ বিকেলে রুদ্র আবার পা টিপে টিপে শোবার ঘরে ঢুকল।

“যাক, ফিরে এলে তাহলে!” ভুতটার কণ্ঠ খুশি খুশি শোনাল, “আমি ভেবেছিলাম আর তোমার দেখা পাব না।”

“এসব আমার কল্পনা। তুই মোটেও সত্যি না।” রুদ্র ভয়ে ভয়ে বলল।

রাপ্টাপুলাসকে বেশ হতাশ দেখাল। “শুনে খুশি হতে পারলাম না। তোমার ব্যাপারে আমাকে এমন কিছু কি বলতে শুনেছ?”

“ভাগ!” রুদ্র এবার চিৎকার করল।

রাপ্টাপুলাস তার লম্বা নাকখানি চুলকাল। “এই যে, বর্দ্দা। আমরা এ ব্যাপারে কথা বলতে পারি না?”

জবাবে রুদ্র তার পায়ের জুতো খুলে ছুড়ে মারল রাপ্টাপুলাসের দিকে।

বামন ভুতটি কুঁই কুঁই করে উঠল কুকুরছানার মতো। তবে রুদ্র বুঝতে পারল আসলে এটা তার আতঙ্কিত চিৎকার। কারণ ভুতটি ঝাঁপ দিয়ে গাছের আড়ালে চলে গেছে।

***

রাতটা বাথটাবেই ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিল রুদ্র। বাথরুমের দরজা লক করা আছে ভেতর থেকে। বামন ভুতটা ভেতরে আসতে পারবে না।

ভন্ ভন্ ভনন্। একটা নীল রঙের বড় ডুমো মাছি অনেকক্ষণ ধরে ঘুরছে। একটু পরপরই বসতে চাইছে রুদ্রের নাকের ওপর। এক থাবড়া দিয়ে মাছিটাকে মেরে ফেলল সে। ধুত্তরি! ঘুমটাই চটকে গেল।

বাথটাব থেকে উঠতে যাবে, চারদিকের দৃশ্য দেখে চমকে গেল রুদ্র। বাথরুমটা ঘন ঝোপঝাড়ে ভর্তি হয়ে গেছে। অটুট নিস্তব্ধতা চারদিকে। রুদ্র তার পায়ের দিকে তাকাল। সাদা বাথটাবটা ধীরে ধীরে গাঢ় রং ধারণ করছে! দেখতে দেখতে ওটা ভেঙে গুড়ো গুড়ো হয়ে গেল। রুদ্র নড়ার চেষ্টা করল, কিন্তু কী এক অদ্ভুত জড়তায় যেন পেয়ে বসেছে তাকে। কয়েক মিনিটের ব্যর্থ লড়াই শেষে রুদ্র আর বলতে পারবে না কী হলো তার...

***

“তো,” ডাক্তার মশাই তার লম্বা নাকখানি চুলকালেন। “তোমার সর্বশেষ মতিভ্রম সহিংসতায় রূপ নিয়েছিল?”

রাপ্টাপুলাস মাথা নেড়ে সায় দিল। সে বিছানায় মাথা এলিয়ে পড়ে আছে। পরনে কটকটে হলুদ রঙের জ্যাকেট আর নীল প্যান্ট।

সাইকিয়াট্রিস্ট চিন্তিত ভঙ্গিতে মাথা নাড়লেন। “কিন্তু তুমি ঔষধ খাওয়ার পরেই আবার সব গায়েব হয়ে গেল?”

- হ্যাঁ, কিন্তু মনে হচ্ছিল যেন নিজ হাতে খুন করলাম।

- ও, এজন্যই তুমি ঔষধ খাওয়া বন্ধ রেখেছ?

“হ্যাঁ,” রাপ্টাপুলাসের কণ্ঠে স্পষ্ট অস্বস্তি। “আমার কেন যেন মনে হয় এটা ঠিক না। সবকিছু এত বাস্তব মনে হয়! ঔষধ খেলেই আবার সব কোথায় গায়েব হয়ে যায়! কোথায় যায় তারা?”

ডাক্তার দীর্ঘশ্বাস ফেললেন, “দেখো আভান্তিকা, মতিভ্রমে আসক্ত হওয়ায় লজ্জার কিছু নেই। কিন্তু এই কল্পনার রাজ্যে ভেসে ভেসে আনন্দ খোঁজা কতটুকু যুক্তিযুক্ত তা ভেবে দেখবে আশা করি।”

ভুতের ডাক্তার হাসলেন, “আমি বলতে চাইছি, আমরা সকলেই জানি যে মানুষ বলতে কোনো প্রাণীর অস্তিত্ব নেই। এটা সম্পূর্ণই কাল্পনিক।”

(Matt Tighe রচিত Figment গল্প অবলম্বনে)

আমি ডাক্তার নই

লিখেছেন কুটুমবাড়ি (তারিখ: রবি, ২০১০-০৬-১৩ ২৩:৩৫)@ সচলায়তন
ক্যাটেগরী: অণুগল্প | সায়েন্স ফিকশন | সববয়সী

রোবটরা আমাকে ভালোবাসে।

অবশ্য রোবটদের পক্ষে যতটা সম্ভব ততটা। এবং জৈবনিক বিচারে, অবশ্যই। আমার চেহারায় নাদুশনুদুশ শিশুসুলভ একটা ব্যাপার আছে। হয়তো এটা ওদের কপোট্রনিক মস্তিষ্কের বাবাসুলভ প্রবৃত্তিকে জাগিয়ে তোলে। যার দরুন তারা আমার প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য হয়। আর এ ব্যাপারটা আমার দায়িত্ব পালনে খুবই সাহায্য করে।

বসার ঘরের মাঝখানে অনড় পড়ে থাকা রোবটটার সামনে আমি হাঁটু গেড়ে বসলাম। রোবটটা নীল রঙের, আকারে ঢাউসই বলতে হয়। বেশ কয়েক বছরের পুরোনো মডেল এটা। এখন প্রায় মানুষের মতোই দেখতে যেসব অত্যাধুনিক রোবট বাংলাদেশের বাজার ছেয়ে ফেলেছে, ও-রকম নয় মোটেই।

আমার পেছনে পুরো পরিবার এসে জড়ো হয়েছে। দুঃখিত, চিন্তিত।

“আপনি কি তাকে সুস্থ করতে পারবেন?” মিসেস রহমান জিজ্ঞেস করলেন। তাঁর কোমল মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ। কাছেই দাঁড়িয়ে থাকা ছোট্ট মেয়েটিকে কাছে টেনে নিলেন তিনি। মি. রহমান আশ্বস্ত করার ভঙ্গিতে হাত রাখলেন স্ত্রীর কাঁধে। যদিও মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে তিনিও কম মুষড়ে পড়েননি।

“আমি ডাক্তার নই,” কিছুটা অন্যমনষ্ক সুরে বললাম আমি, চোখ সেঁটে আছে স্ক্যানারের দিকে।

“মাফ করবেন?” মি. রহমান তাড়াতাড়ি সামনে এগিয়ে এলেন, চমকে গেছেন কিছুটা।

“হুমম?” জিজ্ঞেস করলাম আমি, ঘোর কাটিয়ে উঠছি।

“ওহ্! আমি ডাক্তার নই। রোবটদের আসলে মস্তিষ্ক নেই, তাই তাদের সাইকিয়াট্রিস্ট বা এ জাতীয় কিছুর প্রয়োজন হয় না...” কাজের দিকে আবার মনোযোগ ফিরিয়ে নেয়ার আগে বললাম আমি। “আমি একজন টেকনিশিয়ান।”

“জুডার হঠাৎ করেই এখানে বসে পড়েছে, আর নড়ছে-চড়ছে না,” কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে ছোট্ট মেয়েটি বলল।

“কয়েক দিন আগেই তাকে আমরা সার্ভিসিং করিয়ে এনেছি। সবকিছু ঠিকই ছিল তখন,” মিসেস রহমান যোগ করলেন। “বুঝতে পারছি না ওর কী হয়েছে।”

আমি মাথা নেড়ে “হুমম” শব্দ করলাম, আসলে মনোযোগ নেই ওদের কথায়। “ইউনিট LP-3830, আমার কথার উত্তর দাও।”

“জুডার,” রোবটটার কণ্ঠ আশ্চর্য রকম মানুষের মতো, আমার কথা সংশোধন করে দিল। ওটা এখনও নড়েনি, তার ঝাপসা ফটোরিসিপ্টরে আলোর কোনো চিহ্নই নেই।

“আচ্ছা ঠিক আছে,” মেনে নেয়ার ভঙ্গিতে বললাম আমি। “তা জুডার, তোমার সবকিছু ঠিক-ঠাক মতন কাজ করছে তো?”

ওটা নরম শ্বাস ছাড়ল, “যদি তোমরা একে তা-ই বলো।”

আমি ওর সামনে কার্পেটের ওপর পা ভাঁজ করে বসলাম। “হেই, কী হয়েছে বলবে আমাকে?” আমি তার কাঁধে হাত রাখলাম। জুডারের চোখে একটা ক্ষীণ আলোর রেখা ঝিলিক দিয়েই মিলিয়ে গেল।

“রেডফোর্ডরা নতুন রোবট কিনেছে,” অবশেষে ওটা কথা বলল।

“হ্যাঁ,” মি. রহমান আমার পেছন থেকে সাড়া দিলেন। “আমাদের দুটো বাড়ি পরেই ওদের বাসা। নতুন N-70 সিরিজের একটা রোবট কিনেছে ওরা।”

“বলে যাও,” আমি ওটাকে উৎসাহ দিলাম।

“ওটা বাচ্চাদের স্কুলে আনা-নেয়া করে, বাড়ির টুকটাক সারাইয়ের কাজ করে, এবং তার আছে সম্প্রসারণযোগ্য বাহু এবং বাগানের ঝোপ পরিষ্কার করার একটি বাড়তি উপকরণ, এবং...”

“এবং সে তুলনায় তোমার নিজেকে খুবই সাদামাটা আর সেকেলে মনে হচ্ছে?” নরম সুরে বললাম আমি।

“এই N-70 সিরিজের রোবটগুলি এত অসাধারণ,” ওটা বলল। “ওই ধরনের একটা রোবট এ পরিবারের অনেক বেশি কাজে আসবে। আমার চেয়ে অনেক ভালো কাজ করতে পারবে ওটা।”

“জুডার, তোমাকে এখন মানব প্রজাতির একটা গোপন রহস্য বলব। এটা কিছুটা স্ববিরোধী মনে হতে পারে, প্রতিজ্ঞা করো আমার কথা শুনে তোমার মাথা বিস্ফোরিত হবে না।”

ওটা মাথা নাড়ল, চোখ আগের চেয়ে অনেক উজ্জ্বল দেখাচ্ছে।

“জুডার,” আমি বললাম। “মানুষ আবেগীয় সম্পর্ক তৈরি করে। তারা সব সময়ই নতুন এবং চকচকে জিনিসের পেছনে ছোটে না। তারা তা-ই চায় যা তারা ভালোবাসে।”

“তাঁরা আমাকে ভালোবাসেন?” ওটা জিজ্ঞেস করল, তাকিয়ে আছে আমার কাঁধের ওপর দিয়ে। ওখানে, ওর জন্য অপেক্ষা করছিল অভাবিত মনুষ্যত্ব। ওটা উঠে দাঁড়াল, এবং এক মুহূর্ত পর, আমিও।

“ডাক্তার,” জুডারের কণ্ঠ খুশি খুশি শোনাল। “এটা একেবারেই অযৌক্তিক।”

“জুডার,” আমি হাসলাম, “আমি ডাক্তার নই।”

দায়স্বীকার : ব্রায়ান সি. বায়েরের লেখা দ্য রোবট হুইসপার গল্প অবলম্বনে রচিত

রবিবার, ৬ জুন, ২০১০

ফেসবুক এবং নিষিদ্ধ গন্ধম

দেশে কোনো সরকার আছে কি না এ নিয়ে অনেকেই সন্দিহান হয়ে পড়ছিলেন সম্প্রতি সেইসব আপামর ম্যাঙ্গো পিপলকে দাঁতভাঙা জবাব দিয়েছে সরকার বাহাদুর ফেসবুক আবার চালু হয়েছে দেশে সরকার যে দেশে ভালো কিছু চালু করতে পারেন তা আরও একবার প্রমাণিত হলো

অনেক মুখপোড়াই বলেন যে সরকারের হ্যাডম নাই এম্রিকারে চটায় তারা যে কত বড় বোকার স্বর্গে বাস করছে তা সরকার আগেই প্রমাণ করেছিল ফেসবুক নিষিদ্ধ করার মাধ্যমে এক্ষনে, ফেসবুকরে নিষিদ্ধ গন্ধম মনে কইরা আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা যদি খাওয়ার জন্য লাইন না ধরে, তয় সেই দায়িত্ব সরকার বাহাদুর নিতে যাবে কোন দুঃখে?

এম্নিতেই অনেকে কইয়া বেড়ান দেশে কত অনাচার- কই কিছুই তো বন্ধ হয় না! তারা বোধ হয় ভুলে যান দেশটারে বাস (পড়ুন বাঁশ) যোগ্য করার জন্য সরকার কত কিছু বন্ধ করতাছে- চ্যানেল (ফলে প্রতিযোগিতা বাড়বে), খবরের কাগজ (কাগজের অপচয় কমবে), সামাজিক নেটওয়ার্ক (এগুলি নাকি চূড়ান্ত অসামাজিক)- আরও কত কিছু! এ ছাড়াও দেশে জীবনের নিরাপত্তা নাই বইলা যারা চিল্লায়া গলার রগ ছিঁড়া ফ্যালেন, তারা বোঝার চেষ্টা করেন না যে এতে অভিবাসীর হার বাড়বে, ফলে দেশ হাল্কা হওয়ার পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ভারী হবে আর যারা বলেন, দেশে কত কিছু দরকার- ‌কই কিছুই তো চালু হয় না! তাদেরও জবাব দেওনের একখান সুযোগ পাওয়া গেছে ফেসবুকরে নিষিদ্ধ গন্ধম বানানোর মাধ্যমে কারণ ফেসবুক বন্ধ না করলে তা চালু করার সুযোগ পাওয়া যেত না, এখন প্রমাণিত হয়েছে যে সরকার চাইলে ভালো (ফেসবুক যে ভালো তা কি এই কয় দিনে সবাই হাড়ে হাড়ে টের পান নাই?) কিছু চালু করার ক্ষমতা রাখে! আর কে না জানে এদেশে কিছু জনপ্রিয় করতে চাইলে বেশি ঘাম ফালানোর দরকার হয় না স্রেফ জিনিসটা নিষিদ্ধ করে দিলেই জনপ্রিয় হয়ে যায় (যেমন তসলিমা নাসরিনের লেখা)! আসলে সরকারও চাচ্ছিল ফেসবুকরে জনপ্রিয় করতে (ডিজিটাল সরকার তো, তাই)

এক্ষনে সবাই বেশি বেশি ফেসবুক ব্যবহার করবেন (এতে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে বিদেশে) এবং এই সদাচরণ সত্ত্বেও আর কেউ সরকারের মুণ্ডপাত (নিজের ঘাড়ে মুণ্ড রাখতে চাইলে) করবেন না- এটাই এই ডিজিটাল সরকারের প্রত্যাশা...