শুক্রবার, ১৩ আগস্ট, ২০১০

স্বর্গের টিকিট

লিখেছেন কুটুমবাড়ি (তারিখ: রবি, ২০১০-০৬-২৭ ১৭:৪৪) @ সচলায়তন
ক্যাটেগরি : | | | | |

স্বর্গে ভিড় বেড়ে গিয়েছিল খুব। একটি সিদ্ধান্ত নেয়া হলো শুধু এক দিনের জন্য। ওইদিন স্বর্গে ঢুকতে হলে একটি বিশেষ শর্ত পূরণ করতে হবে।  শর্ত এই যে, মৃত্যুটা হতে হবে চরম দুর্ভাগ্যজনক কোনো দিনে।

বিচারের দায়িত্ব পেলেন জোনা পুত্র সেন্ট পিটার। যথারীতি তিনি স্বর্গের দুয়ারে বসে আছেন। লোকজন লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে স্বর্গের টিকিট পাওয়ার অপেক্ষায়। লাইনের প্রথম লোকটা মধ্যবয়স্ক, মাথাভর্তি উসকো-খুসকো চুল। সেন্ট পিটার তাকে জিজ্ঞেস করলেন, 'বলো, তোমার জীবনের শেষ দিনটা কেমন ছিল?'

লোকটা বলল, 'ভয়ংকর! আমার বউয়ের বয়স ছিল আমার চেয়ে অনেক কম। তার ওপর বেজায় সুন্দরী। প্রতিবেশী অনেকেরই কুনজর ছিল তার দিকে, তাই তাকে চোখে চোখে রাখতে হতো। একসময় আমার সন্দেহ হলো এক প্রতিবেশীর সাথে তার ইটিশপিটিশ চলছে। তক্কে তক্কে রইলাম। একদিন বউকে শহরের বাইরে যাবার কথা বলে বাসা থেকে বের হলাম। আমি নিশ্চিত ছিলাম সে এই সুযোগটা নেবে, তাই তাড়াতাড়িই বাসায় চলে এলাম সেদিন। কিন্তু সারা বাড়ি তন্ন তন্ন করে খুঁজেও ওই রাস্কেলটাকে দেখতে পেলাম না। শেষে খুঁজতে খুঁজতে ব্যালকনিতে গেলাম। আমাদের ফ্ল্যাটটা ছিল বারো তলায়। ও মাগো, দেখি কি সেই খচ্চরটা ব্যালকনি থেকে ঝুলছে! আমি ঘরের ভেতর থেকে ইয়া বড় একটা হাতুড়ি নিয়ে এসে পেটাতে শুরু করলাম তার হাতের ওপর। সে গর্দভটা নিচে পড়ল ঠিকই, কিন্তু একটা ঝোপের ওপর গিয়ে পড়ল। তাই এবার ঘরের ভেতর গিয়ে আস্ত ফ্রিজটা তুলে এনে তার ওপর ছুড়ে মারলাম। অব্যর্থ নিশানা! ওটা সোজা তার মাথার ওপর গিয়ে পড়ল। কিন্তু এ ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় আমার হার্ট অ্যাটাক হলো। আর মর্ত্যের মায়া কাটিয়ে আমি সোজা চলে এলাম এখানে।'

সেন্ট পিটার অস্বীকার করতে পারলেন না যে এটা সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক দিন ছিল তার জন্য। তাই অন্যায় করা সত্ত্বেও তাকে ভেতরে ঢুকতে দিলেন। ওইদিন আরও যাদের মৃত্যু হয়েছিল তারা অপেক্ষা করছে কখন টিকিট পাবে। তিনি লাইনের দ্বিতীয় ব্যক্তিটিকে ডাকলেন।

'সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক ছিল সেই দিনটি।' দ্বিতীয় ব্যক্তিটি বলল। 'আমি আমার তেরো তলার ফ্ল্যাটের ব্যালকনিতে সামান্য ব্যায়াম করছিলাম। অসাবধানে উবু হতে গিয়ে রেলিং টপকে পড়ে যাই। যা হোক, কোনোমতে আমি নিচের ফ্ল্যাটের ব্যালকনি থেকে ঝুলছিলাম। কিন্তু কোত্থেকে এক উন্মাদ এসে আমার হাতের ওপর হাতুড়ি দিয়ে পেটাতে শুরু করে। সৌভাগ্যবশত আমি কিছু ঝোপঝাড়ের ওপর গিয়ে পড়ি। কিন্তু, ওই পাগলটা এর পর আমার ওপর একটা ফ্রিজ ছুড়ে মারে!'

সেন্ট পিটার মুখ টিপে হাসলেন। তবে ঢুকতে দিলেন একেও। মনে মনে ভাবছেন তাঁর কাজটা সত্যিই উপভোগ্য হয়ে উঠতে শুরু করেছে। 'তোমার জীবনের শেষ দিনটা কেমন কেটেছিল?' তিনি জিজ্ঞেস করলেন লাইনে দাঁড়ানো তৃতীয় ব্যক্তিটিকে।

'বলছি। ছবিটা মনে মনে কল্পনা করুন, আমি নগ্ন, একটা ফ্রিজের ভেতর লুকিয়ে আছি....'

*একটি বিদেশি কৌতুক অবলম্বনে রচিত

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন