শনিবার, ২৪ জুলাই, ২০১০

বাংলাদেশ ভ্রমণ গাইড- ২ | বাংলাদেশ এল কোথা থেকে |

লিখেছেন কুটুমবাড়ি (তারিখ: রবি, ২০১০-০৭-২৫ ২৩:৪৮) @ সচলায়তন
ক্যাটেগরী: | | | |

[i]বাংলাদেশের অতীত অধ্যায় মানেই নাটকীয় পালাবদলের ইতিবৃত্ত; হাঙ্গামা ও শান্তি, প্রাচুর্য ও দারিদ্র্যের এমন পিঠাপিঠি অবস্থান বিশ্ব-ইতিহাসেরই বিরল ঘটনা। বাংলাদেশ কখনও সাংস্কৃতিক মহিমায় সমুজ্জ্বল, কখনও যুদ্ধক্লান্ত ও ধ্বংসোন্মুখ। এই দেশের হুড়হাঙ্গামাপূর্ণ ইতিহাস অন্তর্দন্ধ, একের পর এক বহিরাক্রমণ এবং মহাপরাক্রমশালী সাম্রাজ্যের উত্থান ও পতনের সাক্ষী।[/i]


[size=24]যেভাবে জন্ম বাংলাদেশের[/size]

[size=20]শুরুর বৃত্তান্ত[/size]

বাংলাদেশের সর্বপ্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় মহাভারতে। প্রায় ৩০০০ বছর আগের এই হিন্দু পুরাণে বলা হয়েছে রাজপুত্র ভীম-এর বরেন্দ্রসহ পূর্ব ভারত বিজয়ের কথা, প্রাচীন এই রাজ্যটিই বর্তমানের বাংলাদেশ।

আর্য সভ্যতার উৎপত্তি ঘটে খ্রিষ্টপূর্ব ৫ম থেকে ৬ষ্ঠ শতকের মধ্যে। ক্রমান্বয়ে এটি পাকিস্তানের ইন্দুশ নদী উপত্যকা থেকে বাংলাদেশসহ সমগ্র উত্তর ভারতে ছড়িয়ে পড়ে।

খ্রিষ্টপূর্ব ৩২৫ সালে আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট ভারতে পা রাখেন। এই বিপুল হুমকি মোকাবেলায় গাঙ্গেয় নিম্নভূমি থেকে নন্দ রাজবংশের এক দেশীয় রাজার অধীনে বিশাল সৈন্যবাহিনী একত্রিত করা হয়। আলেকজান্ডারের বাহিনী এতে অভিভূত হয়ে যুদ্ধ শুরু না করেই ফিরে যায়।

চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য ‘মগধান’ সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হয়ে পুন্ড্রবর্ধন রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেন যা বর্তমানে [i]মহাস্থানগড়[/i] নামে পরিচিত। তাঁর পৌত্র সম্রাট অশোক উত্তর ভারতজুড়ে এই রাজ্যের বিস্তৃতি ঘটান, অন্যদিকে খ্রিষ্টপূর্ব ২৬২ সালে তাঁর বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণের প্রভাব ছিল সদূরপ্রসারী।

খ্রিষ্টীয় ৪র্থ শতকে উত্তর ভারত গুপ্তদের অধীনে আসে। এদের শাসনামলে বৌদ্ধ ধর্ম সাফল্যের স্বর্ণশিখরে পৌঁছে। হোয়াইট হানদের ক্রমাগত আক্রমণে একসময় গুপ্তরা পর্যুদস্ত হয়ে পড়ে। ৬ষ্ঠ শতকে শশাংক বাংলায় গৌড় সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেন। অবশেষে যুদ্ধবাজ রাজা শ্রী হর্ষের হাতে এই সাম্রাজ্য উৎখাত হয়। শ্রী হর্ষ ৮ম শতক পর্যন্ত বঙ্গ শাসন করেন।

গোপাল, বরেন্দ্রর একজন ক্ষত্রিয় সর্দার, পাল সাম্রাজ্যের (৮ম-১১তম শতক) সূচনা করেন। তাঁর পুত্র ধর্মপাল বরেন্দ্রয় বিশাল [i]সোমপুর বিহার[/i] গড়ে তোলেন। এটি বর্তমানে পাহাড়পুর নামে পরিচিত।

১২ শতকে বাংলায় হিন্দু সেন রাজত্ব কায়েম হয় এবং এ ঘটনায় বিপর্যয় নেমে আসে বৌদ্ধদের ওপর। প্রাণে বেঁচে যাওয়া বৌদ্ধরা চট্টগ্রাম অঞ্চলে পালিয়ে যায়। এখনও সে এলাকায় একটি বৌদ্ধ সম্প্রদায় তাঁদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে। এক শতকেরও কম সময়ের মধ্যে সেন রাজত্ব ডুবে যায় ইসলামের জোয়ারে।

[size=20]মুসলিম রাজত্ব[/size]

মাত্র ২০ জন অশ্বারোহী নিয়ে এক তরুণ তুর্কি, ইখতিয়ারউদ্দিন মোহাম্মদ বখতিয়ার খিলজি, ১১৯৯ সালে বঙ্গ অধিকার করেন। এর ফলে এই এলাকাটি ভারতীয় মুসলিম রাজত্বের কেন্দ্র দিল্লী সালতানাতের অধীনে চলে আসে।

অল্প সময়ের জন্য বাংলায় মামেলুক সালতানাত প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এটি ১৩২০ সালে তুঘলক রাজবংশ কর্তৃক উৎখাত হয়। ১৩৯৮ সালে আরেকটি মুসলিম আক্রমণে তুঘলক সাম্রাজ্যের পতন ঘটে।

মুসলিম রাজত্বের সময় বাংলা এক নতুন যুগে প্রবেশ করে। শহরগুলো বড় হয়ে ওঠে, গড়ে ওঠে প্রাসাদ, দুর্গ, মসজিদ, বাগান, সমাধি, তৈরি হয় নতুন রাস্তা, সেতু এবং নতুন বাণিজ্যপথ উন্মুক্ত হয় যা নতুন সংস্কৃতি ও সমৃদ্ধির ধারা সৃষ্টি করে। বঙ্গের রাজধানী গৌড়, যা বর্তমানে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের ওপর অবস্থিত, পরিণত হয় এক উদারনৈতিক মহানগরীতে। ১৬০৮ সালে রাজধানী ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়।

১৫৭৬ সালে বাংলা পরিগণিত হয় মুঘল সাম্রাজ্যের একটি প্রদেশে। এর পরিণতিতে ভারত প্রবেশ করে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ে, সূচনা হয় ব্রিটিশ রাজত্বের।

[size=20]ব্রিটিশ রাজত্ব[/size]

ভারতীয় উপমহাদেশে প্রভাব বিস্তার করার জন্য পর্তুগিজ, ডাচ, বৃটিশ এবং ফ্রেঞ্চরা দশকের পর দশক ধরে হানাহানি করেছে, কিন্তু বাণিজ্যের ছুতোয় এসে ক্ষমতা হাতে নিতে সমর্থ হলো বৃটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি!

১৭৪০ সালে বাংলা, বিহার ও ওড়িশ্যা এই তিনটি প্রদেশের সুবেদার সরফরাজ খান উৎখাত হন নওয়াব আলী বর্দি খানের হাতে। এর ফলে সূত্রপাত হলো বাংলার স্বাধীন মুসলিম রাজবংশের। ১৭৫৬ সালে সিরাজউদ্দৌলা, ২১ বছর বয়সী বাংলার নবাব, আক্রমণ করলেন কলকাতার বৃটিশ বসতি।

এক বছর পর মীরজাফরসহ কুচক্রীদের ষড়যন্ত্রে স্বাধীন বাংলার সূর্য অস্তমিত হলো, রবার্ট ক্লাইভের নেতৃত্বে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কর্তৃক বঙ্গ বিজয়ের মাধ্যমে উপমহাদেশে সূচনা হলো বৃটিশ রাজত্বের।

বলা হয় বৃটিশ রাজত্বে বাংলা এক সমৃদ্ধির যুগে প্রবেশ করে, কিন্তু ঐতিহাসিকরা এটি দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করে থাকেন। বৃটিশ প্রবর্তিত কৃষিনীতি এবং জমিদার প্রথাকে দায়ী করা হয় বাংলার সম্পদ পাচার হয়ে যাওয়ার জন্য। ফলে সমাজ-কাঠামো ভেঙে পড়ে, এমনকি আজকের বাংলাদেশের মরিয়া পরিস্থিতি সৃষ্টিতে এর রয়েছে সরাসরি অবদান।

হিন্দুরা হাত মেলাল বৃটিশদের সাথে, ইংরেজি ভাষা শিক্ষার সাথে সাথে ভর্তি হতে শুরু করল বৃটিশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয়। মুসলমানরা জাত্যাভিমানে মুখ ফিরিয়ে রইল, জোতদার ও কৃষক হয়ে থাকাই তাদের কাছে শ্রেয়তর মনে হলো। এই ধর্মভিত্তিক বিভাজনের ফলে বৃটিশদের ভারত শাসন সহজতর হলো, তবে তা একই সাথে ভিত্তি গড়ে দিল পরবর্তী দ্বন্দ্ব-সংঘাতের।

প্রথমে হিন্দু এবং মুসলিম উভয়ের সমর্থনে ১৮৮৫ সালে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস গঠিত হয়। কিন্তু লর্ড কার্জন কর্তৃক ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের পর (পূর্ববঙ্গ ও আসাম একটি প্রদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গ, বিহার ও ওড়িশ্যা নিয়ে আরেকটি প্রদেশ) ধর্মীয় বিভক্তির রেখা স্পষ্ট হতে শুরু করল। এটি অনুপ্রেরণা জোগাল মুসলিম স্বার্থ রক্ষায় অল ইন্ডিয়া মুসলিম লীগ গঠনে, অন্যদিকে কংগ্রেসের পতাকাতলে সমবেত হতে শুরু করল প্রভাবশালী হিন্দু গোষ্ঠীগুলো।

১৯১২ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ হলে মুসলিমরা হিন্দু আধিপত্যে ফিরে যেতে ভয় পেল এবং নিজেদের জন্য পৃথক রাষ্ট্র গঠনে উন্মুখ হয়ে উঠল।

১৯৪৩ সালের মন্বন্তরে বাংলায় মারা গেল ৫০ লক্ষেরও বেশি মানুষ, শুধু প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের জন্য এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি। খরায় শস্য নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি বৃটিশ রাজ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে লিপ্ত মিত্রবাহিনীর জন্য বাজারের সব খাদ্যদ্রব্য কিনে নিতে শুরু করায় নেমে এল ভয়ংকর এই মানবিক বিপর্যয়। শহর-নগরগুলো ভরে ওঠল উদ্বাস্তুতে, সেই সাথে বৃটিশ রাজের প্রতি শেষ শ্রদ্ধাটুকুও মুছে গেল মানুষের মন থেকে।

[size=20]ভারত বিভাগ[/size]

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর এটি পরিষ্কার হয়ে গেল যে ইউরোপিয়ান ঔপনিবেশিক যুগের সমাপ্তি ঘটতে চলেছে। ভারতবাসীর ক্রমাগত চাপের মুখে বৃটিশরা পাততাড়ি গুটিয়ে নেয়ার ছক কাটতে শুরু করল।

মহাত্মা গান্ধীর অসাম্প্রদায়িক ভাবমূর্তি সত্ত্বেও মুসলিমরা এ বিষয়ে সচেতন ছিল যে স্বাধীন ভারত হবে হিন্দু প্রধান। দেশটিকে বিভক্ত করা হলো ধর্মের নামে, মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর নেতৃত্বে মুসলিম সমর্থনপুষ্ট 'মুসলিম লীগ' এবং জওহরলাল নেহেরুর নেতৃত্বে হিন্দু সমর্থনপুষ্ট 'ইন্ডিয়ান কংগ্রেস পার্টি'র দাবি অনুযায়ী ভারত বিভাগের আয়োজন সম্পন্ন হলো। সমঝোতা অসম্ভব বুঝতে পেরে ভাইসরয় লর্ড মাউন্টব্যাটেন ভারত ভেঙে পাকিস্তান সৃষ্টির সিদ্ধান্ত নিলেন।

[size=20]পূর্ব পাকিস্তান[/size]

স্বাধীন মুসলিম আবাসভূমি প্রতিষ্ঠার যে স্বপ্ন দেখেছিল মুসলিম লীগ তা বাস্তবায়িত হলো ১৯৪৭ সালে, পাকিস্তান সৃষ্টির মাধ্যমে। কিন্তু এ কেমন পাকিস্তান! পূর্ব বাংলা পরিণত হলো পূর্ব পাকিস্তানে, আর ১২০০ কিলোমিটার দূরে উপমহাদেশের অন্য প্রান্তে পাঞ্জাব অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত হলো পশ্চিম পাকিস্তান। শুরু হলো ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, আর সেই সাথে স্রোতের মতো মানুষ ভেসে চলল এক দেশ থেকে আর এক দেশে। হিন্দুরা দলে দলে আশ্রয় নিল ভারতে আর মুসলিমরা পশ্চিম অথবা পূর্ব পাকিস্তানে।

দুই পাকিস্তানের মানুষ ধীরে ধীরে উপলদ্ধি করতে শুরু করল তাদের ভেতর ধর্ম ছাড়া আর কোনো বিষয়েই মিল নেই! শুধু তা-ই নয়, সব ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হলো পশ্চিম পাকিস্তানে, রাজস্ব বন্টনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভয়ংকর বঞ্চনার শিকার হয়ে পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ বুঝতে শিখল তাদের স্বাধীনতা এখনও সুদূরপরাহত রয়ে গেছে।

উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রচেষ্টা বাংলাভাষী পূর্ব পাকিস্তানের মানুষকে আরও ক্ষেপিয়ে তুলল, ইতিহাসের প্রথম (এবং এখন পর্যন্ত একমাত্র) জাতি হিসেবে তারা ভাষার মর্যাদা রক্ষায় প্রাণ দিল; ১৯৫২ সালের ২১-এ ফেব্রুয়ারি (বর্তমানে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃত) সালাম, রফিক, বরকত, জব্বারসহ আরও অনেকের আত্মাহুতির বিনিময়ে উর্দুর সাথে বাংলাও পেল রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা।

১৯৭০ সালে এক প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় পূর্ব পাকিস্তানের দশ লক্ষাধিক লোকের প্রাণ কেড়ে নিল, কিন্তু এই ভয়াবহ বিপর্যয় সত্ত্বেও পাকিস্তান সরকার হাত গুটিয়ে বসে রইল। ইতিমধ্যে ভাষা আন্দোলনের সূত্র ধরে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ পরিণত হয়েছে জাতীয় আশা-আকাক্সক্ষার প্রতীকে। এর প্রত্যক্ষ প্রমাণ পাওয়া গেল ১৯৭০ সালের জাতীয় নির্বাচনে, পূর্ব পাকিস্তানের সব কটি আসনে (একটি বাদে, এ আসনটি লাভ করেন ত্রিদিব রায়, পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকমা রাজা) জয় লাভের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সংসদের একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে আবির্ভূত হলো। সংবিধান অনুযায়ী ক্ষমতা পরিচালনার ভার আওয়ামী লীগের (পড়ুন পূর্ব পাকিস্তানিদের) হাতে চলে যাচ্ছে দেখে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান সংসদের উদ্বোধনী অধিবেশন বাতিল ঘোষণা করলেন।

[size=20]মুক্তিযুদ্ধ[/size]

১৯৭১ সালের ৭-ই মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দি উদ্যান) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্বাধীনতার ঘোষণা দিতে অল্পই বাকী রাখেন। প্রকৃত অর্থে সেদিনই বাংলাদেশের জন্ম হয়। বঙ্গবন্ধুকে বন্দি করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হলো, বিদ্রোহের ধিকিধিকি আগুন তখন দাউ দাউ করে জ্বলতে শুরু করেছে পূর্ব পাকিস্তানে।

২৫-এ মার্চের কালো রাতে নিরস্র বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল পাকবাহিনী। ‘বেলুচিস্তানের কশাই’ জেনারেল টিক্কা খানের নেতৃত্বে শুরু হলো নির্মম হত্যাযজ্ঞ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোয় ট্যাংক ঢুকে গোলাবর্ষণ করতে লাগল, বুদ্ধিজীবী, ছাত্র, ব্যবসায়ী এবং সন্দেহজনক ‘নাশকতাকারী’দের ধরে ধরে শহরের বাইরে নিয়ে গুলি করে হত্যা করা হতে লাগল। সবচেয়ে বিপাকে পড়ল হিন্দুরা, তাদের ওপর পাকবাহিনীর আক্রোশটা একটু বেশিই মনে হলো।

চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র দখল করে নিল মুক্তিবাহিনী, তাদের নেতা মেজর জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানালেন।

জুনে শুরু হলো গেরিলা যুদ্ধ। পাকবাহিনীর অত্যাচার বাড়ার সাথে সাথে মুক্তিবাহিনীতে যোগ দেওয়া বাঙালির সংখ্যাও বেড়ে চলল। নাপাম বোমা ব্যবহৃত হলো সাধারণ গ্রামবাসীর ওপর। গণ ধর্ষণের মাত্রা দেখে মনে হতে লাগল বাঙালির নৃতাত্ত্বিক পরিচয় মুছে ফেলার ষড়যন্ত্র চলছে। এই দারুণ অরাজকতায় মার্চ থেকে নভেম্বর এই ন-মাসে ১ কোটিরও বেশি লোক আশ্রয় নিল ভারতের উদ্বাস্তু শিবিরগুলোয়।

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সীমান্তে ছোটখাটো লড়াই চলছিল, এই অবস্থায় ১৯৭১ সালের ৩-রা ডিসেম্বর পাক বিমানবাহিনী নির্বুদ্ধিতার পরিচয় দিয়ে ভারতীয় ঘাঁটিগুলোর ওপর আক্রমণ করে বসল। এরপর লড়াই দ্রুত শেষ হয়ে গেল। ভারতীয় বাহিনী সীমান্ত অতিক্রম করল, যশোর মুক্ত হলো ৭-ই ডিসেম্বর, ঢাকা মুক্ত হওয়ার জন্য তখন শুধুই অপেক্ষা। ঘৃণ্য হানাদার বাহিনী এবার আক্রমণের শিকার হলো চতুর্দিক থেকে; পশ্চিম দিক থেকে এগিয়ে এল ভারতীয় বাহিনী, উত্তর ও পূর্ব দিক থেকে মুক্তিবাহিনী, আর চারপাশের বৈরী জনগণ তো রয়েছেই!

১৪-ই ডিসেম্বরের মধ্যে বিজয় সুনিশ্চিত হয়ে গেল। পাক হানাদার বাহিনীর প্রধান জেনারেল নিয়াজী আত্মসমর্পণ করলেন ১৬-ই ডিসেম্বর।

জন্ম হলো বাংলাদেশের।

তথ্যসূত্র : [url=http://www.lonelyplanet.com/bangladesh]লোনলি প্লানেট বাংলাদেশ[/url]
ছবি-কৃতজ্ঞতা : [url=http://www.google.com/imgres?imgurl=http://www.lib.utexas.edu/maps/middle_east_and_asia/bangladesh_rel96.jpg&imgrefurl=http://www.find-our-community.net/region/Central_Asia/Bangladesh_map.htm&h=1314&w=1080&sz=423&tbnid=r342vnI4UYC7eM:&tbnh=150&tbnw=123&prev=/images%3Fq%3Dbangladesh&usg=__HN9zsKwvUN4wueJkGMq2zgZUPFE=&sa=X&ei=a2xMTND7G4KkOLromJYD&ved=0CDUQ9QEwBQ]find-our-community[/url]
******
পূর্ববর্তী পর্ব : [url=http://www.sachalayatan.com/guest_writer/33792]বাংলাদেশ ভ্রমণ গাইড- ১ | সংস্কৃতি ও স্থাপত্যরীতি |[/url]
পরবর্তী পর্ব : বাংলাদেশ ভ্রমণ গাইড- ৩ | পরিবেশ এবং আবহাওয়া |

কুটুমবাড়ি
mhdrakib@gmail.com

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন