শনিবার, ১৭ জুলাই, ২০১০

আমি 'মার-দিও-না' বলচি

লিখেছেন কুটুমবাড়ি (তারিখ: সোম, ২০১০-০৭-০৫ ২১:৪৬)@ সচলায়তন
ক্যাটেগরী: ব্লগরব্লগর | সমসাময়িক | রম্যরচনা | ফুটবল | বিশ্বকাপ

আমি 'মার-দিও-না' বলচি। আমি এখুনো ভামোস ভামোস আর-জিতি-না ফুটবল দলের বল ম্যানেজার আচি। আমার দল বিশ্বকাপ ফুটবল থেকে অসময়ে বিদায় নিয়েচে। শুনেচি অনেকেই আনন্দে বিজয় মিচিল করচেন। আমি নিজেও বিশ্বকাপ থেকে ব্রাজিলের বিদায়ে অনেকেরই কোলে গিয়ে উঠেচিলুম। আর এতে দোষেরই বা কী আচে!

কিন্তু যারা আমাকে নিন্দোচ্চেন তাদেরকে একটু পেচনে তাকাতে বলি। ঈশ্বরের হাত এবং আমার পা দিয়ে আগেও আমি বিশ্বকাপ
ফুটবলে অনেক অঘটন ঘটিয়েচি। ইস্তক বিশ্বকাপও নিয়েচি। এইবার হয়তো পারি নাইক্কা। হেরে গেচি। হেরে গেলেও আমি অনেক জায়গায় শান্তির বাতাস বইয়ে দিতে পেরেচি। প্রকৃত পক্ষে, আমিই এবারের 'নোবল শান্তি পদক'-এর আসল হকদার। যাক, সে কথায় একটু পরে আসচি।

কুনো কুনো মুখফোঁড় বলে, আমার দুইটা কঠিন ব্যামো আছে—খোঁড়ামো আর ত্যাড়ামো। কিন্তু তারা জানে না এগুলা আমার জন্মগত ব্যামো। এবং এই ব্যামোগুলারে আমি বিয়াফক ভালু পাই। একটা খোঁড়া টিম নিয়াও আমি ছিয়াশিতে কাপ নিচি। নব্বুইয়ে খোঁড়াতে খোঁড়াতে আবারও নিয়েই ফেলেচিলুম প্রায়! হায়! কোডেসালীয় কূটচালে ঈশ্বরের হাত সেইবার গুটিয়ে নিতে হয়েচে। এইবার আমি নিজে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হেঁটেচি। কিন্তু বিশ্বকাপের টিকিট ঠিকই নিয়ে ছেড়েচি।

ইস্তক আমার দল এবার বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত উঠে গিয়েচিল! কেনু, এইটা কি কম কথা? আমার মতো একজন কোচিং অ-বিশেষজ্ঞ ম্যানেজার নিয়েও 'আর-জিতি-না' টুর্নামেন্টের এতদূর পর্যন্ত গিয়েচে। এ তো শুধুই ঈশ্বরের কৃপামাত্র নয়। আমার খোঁড়ামোর ভূমিকা তাতে অনেকখানি—এ আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি।

আর ত্যাড়ামো? তার গুণগান আর কত গাইব! এইবার তো আমার ত্যাড়ামোর কারণেই শান্তি আইচে কুনো কুনো জায়গায়। শুনেচি জার্মানির সেই বল বয়টারে ‘নোবল শান্তি পদক’ দেয়ার কথা-বার্তা চইলচে। আরে, ‘নোবল শান্তি পদক’ তো সবার আগে আমার পাওয়া উচিত। আমি ত্যাড়ামো করে তারে বল বয় বলেচিলুম। আর সে কিনা খেলতে নেমেই গোল দেয়া শুরু করল, তাজ্জব! এইসব বল বয়গুলা আর বলই দিল না আমগোরে। ইয়ার পেচনে নাকি সেই অপমানই দায়ী। সেই অপমানের উচিত জবাব তারা দিচে। ভালু কথা। কিন্তু আমি তাগোরে বল বয় না বইললে কী অইত? পারত তারা আমাগোরে গোল বন্যায় ভাসায়া দিতে? তারা চেতচে, জিতচেও। আমরা হারচি, তাই শান্তির মায় বাইচা গেচে। সেই কথা তো কেউ বলে না?

যাউক গা। আশা চিল জার্মানির বল বয়গুলারে এইবার অন্তত হোতায়া ফালামু। একটু গরম করার জন্য 'আর-জিতি-না'র বল ম্যানগুলারে কত করি (ইয়াক! আমি গে না কিন্তু) চুমালাম। কিন্তু হায়, কিচুতেই কিচু হলো না! হেরে গেলুম। কথায় আচে না ঈশ্বরের মাইর, দুনিয়ার বাইর। বলেচিলুম কাপ নিতে পারলে নেংটু অয়ে দৌড় দিব। কিন্তু এখন আমি বোধ হয় ঈশ্বরের ইচ্চে বুঝতে পেরেচি। তিনি চান না তাঁর নামধারী কেউ দুনিয়ায় নেংটু অয়ে দৌড়ুক।

আমার ইচ্চে চিল জুলাইয়ের এগারো তারিখে বিশ্বকাপটা ঈশ্বরের হাতে (অ, বলিনি বুঝি? ঈশ্বর আমার আরেকটা নিক-নেম!) দিব। দিয়ে, কাপটাকে চুমু খাব। ভুভুজেলার মোহন বাঁশি বাজবে। তার সুরে সুরে আমি নেংটু হয়ে দৌড়ুতে শুরু করব। কিন্তু কী থেকে কী অয়ে গেল! অখন আর আমি ভুভুজেলার বাঁশি ভালু পাই না। শুনলেই কান্দন আয়ে।

আমি কি তখন ভেবেচিলাম জার্মানির ওই বল বয়গুলা এভাবে গোল দিতে শুরু করবে! একটি নয়, দুটি নয়, গুনে গুনে চারটি গোল! এই চারটি গোল না আমার ক্যারিয়ারকেই চাট্টিগোল করে দেয়, কে জানে! কাপ তো পেলুমই না, অহেতুকভাবে খেলা শুরু হতে না হতেই নেংটু হয়ে গেলুম!

তাই, আমি অখন শান্তির সাদা পতাকা ওড়াতে চাই। ওরে আমার ভক্ত-আশেকান, কে কোথায় আচিস তোরা! তাড়াতাড়ি শান্তির সাদা পতাকা তোল। ওটাই না হয় পেঁচিয়ে দে আমার গায়ে! আমার জাতটা তো আগেই গিয়েচে। এবার অন্তত আব্রুটা তো বেঁচে থাকুক!

অফ-টপিক : 'মার-দিও-না'র এই শান্তি-স্পিচটি স্বপ্নে প্রাপ্ত। জীবিত, মৃত বা বিবাহিত (মানে অর্ধন্মৃত) কারও সাথে মিল পাওয়া গেলে কাকতালীয় বলে বিবেচিত হবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন